"কুম্ভমেলা" হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের একটি গুরুত্বপূর্ণ তীর্থযাত্রা, যা প্রতি ৩, ৬, ১২ এবং ১৪৪ বছরে একবার পালিত হয়। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ধর্মীয় সমাবেশ হিসেবে পরিচিত। মেলাটি চারটি তীর্থস্থানে অনুষ্ঠিত হয়: প্রয়াগরাজ (যেখানে গঙ্গা, যমুনা এবং সরস্বতী নদীর মিলন), হরিদ্বার (গঙ্গা নদী), নাসিক (গোদাবরী নদী) এবং উজ্জয়িনী (শিপ্রা নদী)" (তথ্য : উইকিপেডিয়া )
আরও পড়ুন : ডাবল ডেকার রুট ব্রিজ
কুম্ভ মেলার প্রকারভেদ :
কুম্ভ মেলা চার প্রকারের হয় এগুলো হল কুম্ভ মেলা, অর্ধ কুম্ভ মেলা, পূর্ণ কুম্ভ মেলা এবং মহা কুম্ভ মেলা। কুম্ভ মেলার আয়োজন প্রতি তিন বছর অন্তর হয়। ১২ বছরে তিন বার কুম্ভ মেলা বসে। এই মেলা প্রয়াগরাজ, হরিদ্বার, নাসিক এবং উজ্জয়িনী তীরে বসে।
অর্ধ কুম্ভ মেলা ১২ বছরে দুবার হয় আর এই কুম্ভ মেলা কেবলমাত্র প্রয়াগরাজ ও হরিদ্বারে হয়।
পূর্ণ কুম্ভ মেলা প্রয়াগরাজ, হরিদ্বার, নাসিক এবং উজ্জয়িনী তীরে বসে জোতিষ গণনার মাধ্যমে ১২ বছরে একবার।
মহা কুম্ভ মেলা শুধুমাত্র প্রয়াগরাজেই আয়োজন করা হয় ১৪৪ বছর পর অর্থাৎ ১২ টি পূর্ণ কুম্ভের পর।
আরও পড়ুন : ভ্ৰমণ : চারখল
২০২৫ এর মহাকুম্ভের সময় সীমা :
১৩ জানুয়ারি থেকে প্রয়াগরাজে মহা কুম্ভ মেলা শুরু হয়েছে, যা ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে। প্রায় ৪৫ দিন ধরে চলা এই বৃহত্তম ধর্মীয় মেলায় ৪০ কোটিরও বেশি মানুষ পবিত্র সঙ্গমস্থলে ডুব দেবেন।
প্রয়াগরাজ : হোটেল ও ধর্মশালা :
এবারে কুম্ভ মেলা আসলে মহাকুম্ভ মেলা, আর উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজ শহরে ২১৮টি হোটেল, ২০৪টি গেস্ট হাউস এবং ধর্মশালা রয়েছে। প্রতিটি হোটেলেই তিল ধারণের কোনো জায়গা নেই প্রায়।
জানুয়ারি থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত হোটেলের রুমের দাম বহুগুণ বেড়েছে। যে হোটেল রুমগুলি ২৪ ঘণ্টায় ৭-৮ হাজার টাকায় পাওয়া যেত, সেগুলি এখন পাওয়া যাচ্ছে ৪৫ হাজার টাকায়। তবে এই রেট শুধুমাত্র মৌনী মকর সংক্রান্তি, অমাবস্যা, বসন্ত পঞ্চমীর মতো বিশেষ স্নান উৎসবের জন্যই অত্যধিক বেশি।
আরও পড়ুন : ভ্রমণ : উত্তরবঙ্গের কালিপুর
এই মেলা থেকে সরকারের আয় :
মহাকুম্ভ মেলা বিশ্বের বৃহত্তম অস্থায়ী শহরের সমতুল্য। যেখানে যেকোনও সময়ে একত্রে ৫০ লক্ষ থেকে ১ কোটি মানুষের থাকার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
প্রশাসনের হিসাব বলছে, মহাকুম্ভ মেলার এই বিরাট, বিপুল আয়োজনের মাধ্যমেই উত্তরপ্রদেশ
সরকারের প্রায় ২ লক্ষ কোটি টাকা পর্যন্ত আয় হতে পারে!
সংবাদ সংস্থা আইএনএস-এর হিসাব অনুসারে, যদি মহাকুম্ভে আসা পুণ্যার্থী ও ভক্তরা তাঁদের গড় খরচ বাড়িয়ে ১০,০০০ টাকা করেন, তাহলেই উত্তরপ্রদেশ সরকারের আয় এক লাফে বেড়ে দ্বিগুণ - প্রায় ৪ লক্ষ কোটি টাকা হবে! তথ্যাভিজ্ঞ মহল বলছে, এই সম্ভাবনা বাস্তবায়িত হলে সাধারণ এবং রিয়েল জিডিপি ১ শতাংশেরও বেশি বাড়বে।
এই মেলার সময়টায় বিভিন্ন ধরনের খাবার ও পানীয় - যার মধ্যে রয়েছে প্যাকেট বন্দি খাবার, জল, বিস্কুট, জুস এবং ভরপেট খাবার বা মিল - এই সবকিছুর বেচাকেনা করেই প্রায় ২০,০০০ কোটি টাকার ব্যবসা হবে।
এছাড়াও, পুজোর সামগ্রী বেচা-কেনা করেও ভালোই লক্ষ্মীলাভ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই ধরনের পণ্যের মধ্যে থাকছে - তেল, প্রদীপ, গঙ্গাজল, মূর্তি, লাঠি, ধর্মীয় বইপত্র প্রভৃতি। এসবের ব্যবসা করে আরও প্রায় ২৫,০০০ কোটি টাকার ব্যবসা হবে।
আরও পড়ুন : দেখুন উত্তরবঙ্গের তিস্তা বুড়ির নাচ
আরও পড়ুন : ডুয়ার্স এ এবার হাতি কে স্নান করান সঙ্গে এলফির মজা নিন
এছাড়াও রয়েছে পুণ্য়ার্থীদের যাতায়াত, থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা সংক্রান্ত খরচপাতি ও তার সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন ব্যবসা। এসব থেকে অন্তত ১২,০০০ কোটি টাকা রোজগার হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
পাশাপাশি, মহাকুম্ভ মেলার ফলে শুধুমাত্র পর্যটন ব্যবসার অধীনেই আরও ১৫,০০০ কোটি টাকার লেনদেন হবে। এর মধ্য়ে রয়েছে - প্যাকেজ ট্যুর, গাইডের খরচ প্রভৃতি।
অস্থায়ী মেডিক্যাল ক্যাম্প, বিভিন্ন ধরনের আয়ুর্বেদিক পণ্য এবং ওষুধপত্র বিক্রি আরও প্রায় ৫,০০০ কোটি টাকা রোজগার হবে রাজ্যের।
অন্যদিকে, আধুনিক প্রযুক্তির প্রত্যক্ষ ব্যবহার করেও প্রায় ১,৫০০ কোটি টাকা রোজগার হবে। যার মধ্যে রয়েছে - ই-টিকেটিং, ডিজিট্যাল পেমেন্ট, ওয়াই-ফাই পরিষেবা, মোবাইল চার্জিং প্রভৃতি।
এছাড়াও, বিজ্ঞাপন ও বিপণনের মাধ্যমে আরও প্রায় ১২,০০০ কোটি টাকার কারবার হবে।
কুম্ভ ঘিরে পারদের মতো চড়েছে দাম। ভোপাল থেকে প্রয়াগরাজ যেতে বিমানের খরচ পড়ছে প্রায় ১৮ হাজার টাকা। পশ্চিমবঙ্গ থেকে এই দাম পড়ছে ১৬ হাজার টাকা।
আরও পড়ুন : উত্তরবঙ্গের লুপ ব্রিজ, এক দর্শনীয় স্থান
২০১৯ এ অর্ধকুম্ভ মেলা থেকে কত আয় হয়েছিল :
২০১৯ সালে প্রয়াগরাজে যে অর্ধকুম্ভ মেলা হয়েছিল, তার ফলে রাজ্যের রোজগার হয়েছিল প্রায় ১.২ লক্ষ কোটি টাকা। সেবারের সেই আয়োজনে অংশ নিয়েছিলেন প্রায় ২৪ কোটি ভক্ত ও দর্শনার্থী।
আগ্রহী অন্যান্য দেশ :
কুম্ভ মেলা (Kumbh Mela) নিয়ে আগ্রহী হয়ে উঠেছে পাকিস্তান। বিষয়টি শুনতে অবাক লাগলেও এমনই তথ্য সামনে এসেছে। আসলে ট্রেন্ডিং টপিক সার্চের কুম্ভ মেলা নিয়ে যে দেশ সবচেয়ে বেশি সার্চ করেছে সেটি হচ্ছে পাকিস্তান। শুধু পাকিস্তানই নয় এই তালিকায় নাম লিখিয়েছে কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরশাহী, বাহরিন।
মহাকুম্ভ মেলায় আকর্ষণ :
মহাকুম্ভ মেলায় অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্রে হর্ষা রিচারিয়া। তাঁর নানা ভিডিয়ো ভাইরাল হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় রীতিমতো ঝড় তুলেছেন এই সাধ্বী। কে এই হর্ষা রিচারিয়া যাঁকে নিয়ে এত আলোচনা? একজন সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার, অ্যাঙ্কর হয়ে উঠেছেন সাধ্বী…।
ভাইরাল গার্ল মোনালিসা
মোনালিসা এবারের কুম্ভ মেলায় মালা বিক্রি করতে এসেছেন। তাঁর কয়রা চোখের এবং তাঁর সুন্দরতা নেটিজেনদের মুগ্ধ করেছে এবং যথারীতি তিনি ভাইরাল হয়েছেন। তাঁর অসংখ্য ভিডিও বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া মাত করে রেখেছে।
আবার কবে কুম্ভ মেলা অনুষ্ঠিত হবে?
প্রয়াগরাজের পরে কোথায় কুম্ভ মেলা অনুষ্ঠিত হবে?
প্রয়াগরাজের পরবর্তী কুম্ভ মেলা ২০২৭ সালে মহারাষ্ট্রের নাশিকে অনুষ্ঠিত হবে। এই কুম্ভ মেলা ১৭ আগস্ট মঙ্গলবার শ্রাবণ মাসের শেষ দিন অর্থাৎ শ্রাবণ পূর্ণিমা থেকে শুরু হবে, যা এক মাস স্থায়ী হবে। কুম্ভ মেলার প্রথম দিনে রাখিবন্ধন উৎসবও পালিত হবে। এই সময় লোকেরা গোদাবরী নদীর তীরে স্নান করে পবিত্র ডুব দেবেন। নাশিক ভারতের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় শহর। নাশিকে ত্র্যম্বকেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গও রয়েছে।
২০২৮ সালে কোথায় কুম্ভ মেলা অনুষ্ঠিত হবে?
নাশিকের পরবর্তী কুম্ভ মেলা ২০২৮ সালে মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়িনীতে অনুষ্ঠিত হবে। এই কুম্ভ মেলা চৈত্র মাসের পূর্ণিমা থেকে শুরু হবে অর্থাৎ ৯ এপ্রিল থেকে। এই কুম্ভ মেলা বৈশাখ মাসের পূর্ণিমা পর্যন্ত চলবে। এই সময় লোকেরা পবিত্র ক্ষিপ্রা নদীতে ডুব দেবেন। উজ্জয়িনী কুম্ভের সময় ক্ষিপ্রা নদীর রামঘাটে স্নান করার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। উজ্জয়িনীতে মহাকালেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ স্থাপিত। এছাড়াও এখানে হরসিদ্ধি শক্তিপীঠও রয়েছে।
হরিদ্বারে কবে কুম্ভ অনুষ্ঠিত হবে?
প্রয়াগরাজ, নাশিক এবং উজ্জয়িনী ছাড়াও হরিদ্বারেও প্রতি ১২ বছর অন্তর কুম্ভ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। ২০৩৩ সালে হরিদ্বারে কুম্ভ মেলা অনুষ্ঠিত হবে। এই কুম্ভ মেলা ১৪ এপ্রিল থেকে শুরু হবে, যা ১৫ মে পর্যন্ত চলবে। এক মাসব্যাপী এই কুম্ভ মেলায় লোকেরা পবিত্র গঙ্গা নদীতে স্নান করবেন। এটি পূর্ণ কুম্ভ হবে। হরিদ্বারকে ভগবান বিষ্ণুর নগরীও বলা হয়।
Kumbha Mela Bengali Article
ليست هناك تعليقات:
إرسال تعليق