ডুয়ার্সের বাগরাকোটে রাজ্যের প্রথম লুপ সেতু, ভারতীয় সেনাবাহিনীর চীন সীমান্তে যাওয়ার এই রাস্তা জনগণের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু
রাজ্যের প্রথম লুপ সেতু:
পশ্চিমবঙ্গ (ভারতের একটি অঙ্গরাজ্য ) রাজ্যের প্রথম লুপ সেতু তৈরির কাজ সম্পূর্ণ হতে চলেছে উত্তরবঙ্গের জেলা জলপাইগুড়ির ডুয়ার্সের বাগরাকোটে। যদিও সেতুটি সর্বসাধারণের জন্য এখনও খুলে দেওয়া হয়নি। তবে রাস্তার মাঝে সর্পিল আকারে নির্মীয়মাণ লুপ সেতুটি দেখতে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকরা ইতিমধ্যে বাগরাকোটে ভিড় জমাচ্ছেন ।
লুপ সেতুর দূরত্ব :
জলপাইগুড়ি জেলার বাগরাকোট থেকে প্রথম ১৮ কিলোমিটারের মধ্যে ১২ - ১৫ কিলোমিটার রাস্তা পাহাড় কেটে তৈরি করা হচ্ছে। প্রথম ১৮ কিলোমিটার রাস্তার বরাত পেয়েছে ঝাড়খণ্ডের একটা সংস্থা। বাগরাকোট থেকে লুপ সেতুর দূরত্ব ৫ কিলোমিটার। দু’টি ভাগে সেতু রয়েছে ৷ একটির দৈর্ঘ্য ৯০০ মিটার ও অপরটির ৫০০ মিটার।
লুপ সেতু কোথায় যুক্ত হচ্ছে :
বেশ কয়েক বছর ধরে জলপাইগুড়ি জেলার বাগরাকোট থেকে নাথুলা পর্যন্ত দুই লেনের এই রাস্তা তৈরি হচ্ছে। এই রাস্তা সিকিমের সঙ্গে যুক্ত করবে পশ্চিমবঙ্গকে। বাগরাকোট থেকে সেনাবাহিনীর ক্যাম্পের সামনের রাস্তা দিয়ে সামান্য গেলেই নতুন ৭১৭ নম্বর জাতীয় সড়কের এই রাস্তা । আগামিদিনে সেনার ভারত-চিন সীমান্তে যুদ্ধ সরঞ্জাম নিয়ে যাওয়া বা যাতায়াতের জন্য এটি মূল রাস্তা হতে চলেছে। সেতু ও রাস্তাটি অনেকটা সাপের মতো একে বেঁকে যাওয়ার কারণে এই সেতু ও রাস্তার নাম অনেকে স্নেক রোড দিয়েছেন।
লুপ সেতু, রাস্তা ও জাতীয় সুরক্ষা :
শিলিগুড়ি থেকে সেভক হয়ে ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক এতদিন ছিল বাংলা ও সিকিমের লাইফ লাইন। তবে উত্তরবঙ্গ থেকে সিকিম যাওয়ার ওই রাস্তা ধস বা প্রাকৃতিক অনেক কারণে মাঝেমধ্যেই বন্ধ হয়ে যায় । এর কারণ তিস্তার ভাঙন ও ধস। এতদিন ওটি ছিল সোনাবাহিনীর পরিবহণের একমাত্র রাস্তা । সীমান্তে চিনের আগ্রাসনের ফলে মাঝেমধ্যেই উত্তেজনা ছড়ায়।
তাই ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক বন্ধ হয়ে গেলে দেশের সুরক্ষার ক্ষেত্রে একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। সেই দিক থেকে বাগরাকোট থেকে নাথুলা পর্যন্ত এই রাস্তাটি হওয়ার ফলে এবার থেকে সামরিক পরিবহণের ক্ষেত্রে সুবিধা হবে । সেনার কাছে একটি বিকল্প রাস্তা থাকবে৷
সেভক বা 10 নম্বর জাতীয় সড়কের বিকল্প রাস্তা হবে এটি ৷ বাগরাকোট দিয়ে নাথুলা পর্যন্ত এই রাস্তাটি হাসিমারা ও বিন্নাগুড়ি সেনা ছাউনিকে যুক্ত করবে । একইসঙ্গে বাগরাকোট ডামডিম এলাকায় রেললাইনের উপর একটি বড় সেতুও তৈরি করা হচ্ছে । সব মিলিয়ে নাথুলা সীমান্তে চিনের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে বিকল্প রাস্তা হিসেবে ভারত সরকার এটি তৈরি করছে।
পর্যটকদের কাছে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু:
বাগরাকোট থেকে ৭১৭ নম্বর জাতীয় সড়কটি ভারত-চিন সীমান্তে নাথুলা পর্যন্ত যাবে। পাহাড় কেটে রাস্তাটি 2018-2019 সাল থেকে তৈরি করা হচ্ছে। এই জাতীয় সড়কটির জলপাইগুড়ি জেলার বাগরাকোট থেকে চুইখিম ১৩ কিলোমিটার রাস্তার মাঝে বাগরাকোট চুইখিমে লুপ পুলটি তৈরি হয়েছে । বাগরাকোট থেকে চার কিলোমিটার দূরেই এই লুপ সেতুটি তৈরি হয়েছে, যা পর্যটকদের কাছে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু।
লুপ সেতু থেকে প্রাকৃতিক নৈসর্গ উপভোগের সুযোগ পাবেন মানুষ। দু'পাশে চোখ রাখলেই মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে যেতে হবে। চোখ বাড়ালেই দেখা যাবে নদী। বিশেষত সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের সময় এক মায়াবী পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। অনেকের ধারণা, আগামিদিনে বাগরাকোটের অন্যতম ‘টুরিস্ট স্পট’ হয়ে উঠতে চলেছে লুপ সেতু।
কোন কোন জায়গা যুক্ত হচ্ছে :
জলপাইগুড়ি জেলার বাগরাকোট থেকে চুইখিম, দাড়াগাও, বরবর হয়ে কাফের হয়ে কালিম্পং বাইপাস হয়ে আলগারা, ঋষি পেডং, রোরাথাং পাকয়াং এয়ারপোর্টের পাশ দিয়ে রানিপুল হয়ে ভারত-চিন সীমান্ত নাথুলা পর্যন্ত দুই লেনের জাতীয় সড়কটি যাবে । ন্যাশনাল হাইওয়ে অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড 717 নম্বর জাতীয় সড়কটি নির্মাণ করছে । জলপাইগুড়ি, কালিম্পং, পাকয়াং ও গ্যাংটক জেলাকে জুড়বে এই জাতীয় সড়কটি । এই জাতীয় সড়কটি প্রায় 200 কিলোমিটার লম্বা ।
লুপস্টার :
নির্মাণকাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি। কিন্তু তাতেই নেটদুনিয়ায় ‘সুপারস্টার’ হয়ে উঠেছে পশ্চিমবঙ্গের প্রথম লুপ সেতু। সেই সেতু দেখতে বাগরাকোটের আশপাশের এলাকা অনেকেই আসছেন। পর্যটকদের কেউ-কেউও ঢুঁ মেরে যাচ্ছেন। তুলছেন সেলফি। বানাচ্ছেন রিল। আর সকলেই একটা কথা বলছেন, এই সেতুর উপর দিয়ে যাওয়ার মজাটাই আলাদা হবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন