মরসুমে কেনাকাটা লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
মরসুমে কেনাকাটা লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

রায়গঞ্জের তুলাইপাঞ্জি চাল অতুলনীয় স্বাদ ও সুগন্ধির জন্য বিশ্ব বাজারে সমাদৃত, কি এর গুণাবলী? কত চাষ হয়?

"তুলাইপাঞ্জি" নামটি দুটি বাংলা শব্দ থেকে এসেছে: “তুলাই” যার অর্থ কোমল বা হালকা এবং “পাঞ্জি” যার অর্থ চাল। এই জাতটির একটি দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে এবং এটি শতাব্দী ধরে পশ্চিমবঙ্গে চাষ করা হয়ে আসছে, যার বৈশিষ্ট্যগুলি স্থানীয় রন্ধনপ্রথায় অঙ্গীভূত হয়েছে।


Pic: Amazon

তুলাইপাঞ্জিকে 'অ-বাসমতি সুগন্ধি চাল' হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে। এটির গড় দৈর্ঘ্য 5.5 মিমি, দৈর্ঘ্য/প্রস্থ অনুপাত 3.4 এবং প্রসারণ অনুপাত 1.6 সহ মাঝারি-লম্বা সরু দানা রয়েছে। 


এই জিআই ট্যাগ করা প্রাচীন লোক চাল 2012 লন্ডন অলিম্পিকে আমাদের অপরাজেয় রন্ধন সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্ব করেছিল! তুলার (তুলন) মতো সুগন্ধি এবং নরম, এটাই তুলাইপাঞ্জির অর্থ এবং স্বাদ। এর সুগন্ধি এই অ-বাসমতী ভাতকে পুলাও, ভাজা ভাত, বিরিয়ানি এবং পিঠে, পায়েশের মতো মিষ্টান্ন এবং স্থানীয় সুস্বাদু খাবারের জন্য একটি দুর্দান্ত পছন্দ করে তোলে। আমরা প্রায়শই এটি আমাদের রোজের চাল (আমাদের প্রতিদিনের চাল) হিসাবেও ব্যবহার করি।


রান্না করা ভাত খুব সুস্বাদু, গঠনে ভালো, চেহারায় উজ্জ্বল, উচ্চ অ্যামাইলোসকন্টেন্টের কারণে আঠালো নয় এবং ভঙ্গুর। তুলাইপাঞ্জিতে রয়েছে অ্যামাইলোজ- ২৮.৩%, প্রোটিন-৭.৩%। 


সম্প্রতি, তুলাইপাঞ্জি চাল তার বিশেষ সুগন্ধ এবং স্বাদের পাশাপাশি পুষ্টিগত উপকারিতার জন্যও বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। এটি বিশেষত বাংলা রন্ধনশৈলীতে ব্যবহৃত হয়, যেমন পিঠে (চাল কেক) এবং পায়েস (মিষ্টি চালের পুডিং)।


এই চালটি তার মৃদু, বাদামী স্বাদ এবং সুগন্ধের জন্য পরিচিত, যা যে কোনও রান্নায় যোগ করলে তা উন্নত হয়ে ওঠে।


তুলাইপাঞ্জি চালের উপকারিতা:

তুলাইপাঞ্জি চালের বেশ কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে, যা স্বাস্থ্য-conscious মানুষদের জন্য এটি একটি ভালো পছন্দ করে তোলে। এটি থায়ামিন, নাইসিন, ভিটামিন B6, আয়রন এবং ম্যাগনেসিয়ামের মতো অপরিহার্য পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ। 


চালটিতে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি শরীরের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে সহায়ক, যার ফলে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং কিছু ক্যান্সারের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমে যেতে পারে। এছাড়াও, এর উচ্চ ফাইবার কন্টেন্ট পাচন প্রক্রিয়াকে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সহায়ক।


তুলাইপাঞ্জি চালের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা হল এর নিম্ন গ্লাইসেমিক সূচক। যেসব খাবারের গ্লাইসেমিক সূচক কম, তা ধীরে ধীরে হজম হয় এবং রক্তে শর্করা বাড়ানোর হার ধীর হয়। এর ফলে, এটি ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে এবং খাওয়ার পর দীর্ঘ সময়ের জন্য তৃপ্তি অনুভূতি বজায় রাখে। আরও কী, তুলাইপাঞ্জি চাল প্রাকৃতিকভাবে গ্লুটেন-মুক্ত, যা সেলিয়াক রোগ বা গ্লুটেন সহনশীলতা সমস্যাযুক্ত মানুষের জন্য উপযোগী।


কিছু গবেষণায় এও প্রমাণিত হয়েছে যে, তুলাইপাঞ্জি চালের উপাদানগুলি কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করতে পারে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি আরও কমিয়ে দিতে পারে। তবে, মনে রাখা উচিত যে তুলাইপাঞ্জি চালের স্বাস্থ্য উপকারিতাগুলি সম্পর্কে আরও গবেষণা প্রয়োজন। যে কোনো খাবারের মতো, এটি সুষম ডায়েটের অংশ হিসেবে পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত।


উৎপাদনের সময় সীমা :

ঐতিহ্যগতভাবে, তুলাইপাঞ্জি অগাস্ট-ডিসেম্বর সময়কালে বর্ষা মৌসুমের পরে মধ্য-জমি থেকে উঁচু জমিতে এবং বিশেষ করে পাট কাটা ক্ষেতে কোনো সার ব্যবহার না করেই চাষ করা হয়। কম মাটির উর্বরতা এবং আর্দ্রতার চাপ সাধারণত ক্রমবর্ধমান ক্ষেত্রে বিরাজ করে এবং সুগন্ধের পিছনে মূল কারণ বলে বিশ্বাস করা হয়। 


অজৈব সার সাধারণত এই চাল এর সুগন্ধ এবং অন্যান্য গুণগত মান কমিয়ে তোলে আর এই কারণে অজৈব সার তুলাইপাঞ্জি উৎপাদনে ব্যবহার করা হয় না।


সাল অনুসারে ফলন :

বর্তমানের তথ্য অনুযায়ী খাদ্যরসিকদের জন্য সুখবর। উত্তর দিনাজপুরে জেলার একমাত্র নিজস্ব দেশি ধান তুলাইপাঞ্জি উৎপাদনে রেকর্ড উৎপাদন গড়লেন কৃষকরা। ২০২৪ সালের খারিফ মরশুমে সর্বাধিক বেশি তুলাইপাঞ্জির ফলন হয়েছে উত্তর দিনাজপুরে। 


শুধুমাত্র রায়গঞ্জ রায়গঞ্জ মহকুমার নির্দিষ্ট কৃষিজমিতে সুস্বাদু, সুগন্ধে অতুলনীয় তুলাইপাঞ্জি ধান চাষের সুযোগ সীমাবদ্ধ। জেলাজুড়ে প্রায় ২ লক্ষ ৬ হাজার হেক্টর কৃষিজমিতে উচ্চ ফলনশীল আমন ধান চাষ হয়েছিল। তার মধ্যে ১২ হাজার হেক্টর জমিতে তুলাইপাঞ্জি ধান চাষ করেছিলেন ২২ হাজার ৩০০ কৃষক।  


২০২১ সালের থেকে অন্তত ৬ হাজার মেট্রিন টন বেশি তুলাইপাঞ্জি ধান উৎপাদন হয়েছে। জেলা কৃষি দপ্তর সূত্রে জানানো হয়, 


২০১৬- ১৭ অর্থবর্ষে মাত্র ৬ হাজার হেক্টর জমিতে তুলাইপাঞ্জি ধান চাষ হত। 


২০১৮-১৯ সালে তার পরিমাণ বেড়ে সাড়ে ৭ হাজার হেক্টর জমিতে তুলাইপাঞ্জির চাষ হয়। 


২০২০-২১ সালে ওই চাষের জমির পরিমাণ বেড়ে ১ হাজার হেক্টর জমিতে তুলাইপাঞ্জি আবাদ হয়েছিল। 


২০২১-২২ অর্থবর্ষে সাড়ে ৯ হাজার হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়। 


২০২১-এ ১৮ হাজার মেট্রিন টন তুলাইপাঞ্জি ফলন হয়েছিল। গত বছরের উৎপাদনকে পিছনে ফেলে ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে ১২ হাজার হেক্টর জমিতে প্রায় ২৪ হাজার মেট্রিন টন, 


২০২৩- '২৪ সালে ৩০ হাজার মেট্রিক টন তুলাইপাঞ্জির ফলন হয়েছে। 


সম্প্রতি অর্থাৎ ২০২৫ সালে ৩৬ হাজার মেট্রিক টন তুলাইপাঞ্জি ধান কৃষকের গোলায় উঠেছে বলে সংশ্লিষ্ট দপ্তর সূত্রে জানানো হয়েছে।


রাজ্য সরকারের প্রকল্প :

সুগন্ধি ধান চাষের জন্য রাজ্য সরকারের তরফে একটি প্রকল্প চালু হয়েছে। জেলার নিজস্ব তুলাইপাঞ্জি আবাদে কৃষকদের বিনামূল্যে তুলাইপাঞ্জির বীজ সরবরাহ করা হয়।


তুলাইপাঞ্জির চাহিদা গোটা পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে রয়েছে। তাই জেলার রায়গঞ্জ এবং হেমতাবাদের চাষিদের তুলাইপাঞ্জি চাষে উৎসাহ দেওয়া হয়। ফলে গত কয়েক বছরের মধ্যে তুলাইপাঞ্জির জমির পরিমাণ যেমন বেড়েছে, সেই সঙ্গে ফলনও দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। 


জেলার কৃষি দপ্তর জানিয়েছে যদিও সেই সংখ্যা বাড়বে । জেলা কৃষি অধিকর্তাদের মত অনুযায়ী, 'সুগন্ধী ধান চাষের জন্য রাজ্য সরকারের তরফে বাংলায় প্রকল্প চালু হয়েছে। জেলার নিজস্ব তুলাইপাঞ্জি আবাদে কৃষকদের বিনামূল্যে তুলাইয়ের বীজ সরবরাহ করা হয়। তুলাইয়ের চাহিদা গোটা রাজ্যে রয়েছে। তাই জেলার রায়গঞ্জ এবং হেমতাবাদের চাষিদের তুলাইপাঞ্জি চাষে উৎসাহ দেওয়া হয়। 


ফলে গত কয়েক বছরের মধ্যে তুলাইয়ের জমির পরিমাণ যেমন বেড়েছে, সেই সঙ্গে ফলনও দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। 'তুলাইপাঞ্জি ধানের জীববৈচিত্র্য যাতে কেউ চুরি করতে না পারে, সেই কারণে ২০১৭ সালে জিআই অর্থাৎ জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন-এর অন্তর্ভুক্ত হয়েছে তুলাইপাঞ্জি।' 


রায়গঞ্জ শহর সংলগ্ন কর্ণজোড়া এলাকায় তুলাই ধান ভাঙার জন্য অত্যাধুনিক যন্ত্র বসানো হয়েছে। কৃষকদের এই ধান চাষে আগ্রহ বাড়ানোর জন্য রাজ্য সরকারের তরফ থেকে একাধিক সুযোগসুবিধা দেওয়ার চিন্তাভাবনা চলছে।

শীতের মরসুম ২০২৪ : পুলি পিঠে পায়েস ও নলেন গুরের মাহাত্ম

ব্রিটানের রানী এলিজাবেথ একবার সুস্বাদু নলেন (Nalen Gur) গুড়ের পাটালি (Date Palm Jaggery Brick) খেয়ে মুগ্ধ হয়েছিলেন। শীত চলে এসেছে আর সঙ্গে বাঙালি বাড়ীতে পুলি পিঠা পায়েসের ধুম পরে গিয়েছে যার সঙ্গে নিবিড় ভাবে জুড়ে রয়েছে নলেন গুড়। 

এতে কোনো সংশয় নেই যে আজ বাংলার খেজুর (Khejur) রস থেকে গুড়, পাটালি, মিষ্টি, মোয়া, দই, কেক, আইসক্রিম ইত্যাদি একটি শিল্পের জায়গায় পৌঁছে গেছে। নলেন বা খেজুর গুড় মূলত ধরণের পাওয়া যায় তরল যা ঝোলা গুড় এবং শক্ত বা পাটালি গুড়। ১০০ গ্রাম গুড় এর মধ্যে ৩৫৫ কিলো কালোরি এনার্জি থাকে যেখানে ৮৭ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট . ৬৯ গ্রাম প্রোটিন বর্তমান।

 

এই আর্টিকেল থেকে নলেন গুড় নিয়ে আমরা যে বিষয় গুলি জানতে পারবো 

- শিউলি বা গাছি 

- নলেন গুড়ের নামকরণ 

- নলেন গুড় উৎপাদনের সময় 

- প্রকৃতির মার উৎপাদনে ঘাটতি 

- খেজুর রস থেকে গুড় তৈরি করার পদ্ধতি 

- খেজুর / নলেন গুড়ের উপকারিতা

- যে স্থান গুলিতে ভালো মানের খেজুর গুড় পাওয়া যায় 

- নলেন গুড় অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট

- খেজুর নলেন গুড় থেকে তৈরি হওয়া খাবারের তালিকা 

- নলেন গুড় তার সঙ্গে সম্পর্কিত কর্ম সংস্থান 

- নলেন গুড়ের ইতিহাস সাহিত্য সিনেমা 

- নলেন গুড়ের গান 

আরও পড়ুন : রায়গঞ্জের তুলাইপাঞ্জি চাল অতুলনীয় স্বাদ ও সুগন্ধির জন্য বিশ্ব বাজারে সমাদৃত, কি এর গুণাবলী? কত চাষ হয়? 

শিউলি বা গাছি 

খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ সেখান থেকে গুড় তৈরি করে মোটেও সহজ কাজ নয়। পৌষ মাঘ মাসের কোন কোনে ঠান্ডায় আমরা যখন লেপ মুড়ি দিয়ে আরামে ঘুমোই তখনি শুরু হয় খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করার কাজ। আর এই কাজ টি যারা করে থাকেন তাঁদের আমরা শিউলি (Siuli) বা গাছি (Gachi) বলে থাকি। যদিও অশ্বিন মাস থেকেই এই কর্মযোগ্য অর্থাৎ রস সংগ্রহ করার কাজ শুরু হয়ে যায়। সারা বছর অন্যান্য কাজ করে থাকলেও এই ছয় মাস শিউলিরা এই কাজেই মনোনিবেশ করে। যদিও এদের জীবন সংগ্রাম খুব কষ্টের এবং অনটনের। গাছি বা শিউলিরা যে সকলেই নিজের নিজের জায়গায় কাজ পান তা নয়, অনেকেই অন্য জেলায় গিয়ে কাজ করেন।

নলেন গুড়ের নামকরণ 

রুক্ষ প্রান্তরে মূলত খেজুর গাছ পাওয়া যায়। যার যত গুলো গাছ আছে, শিউলিরা চেষ্টা করেন সেগুলো রস সংগ্রহের জন্য প্রস্তুত করা। অশ্বিন কার্তিক মাসেই গাছের ওপরের অংশ চেঁছে ফেলা হয়। তারপর সেই অংশে নল ঢুকিয়ে মাটির কলসি বেঁধে দেয়া হয়। অনেকেরই ধারণা যে এই নল থেকেই নলেন গুড়ের নামকরণ।

নলেন গুড় উৎপাদনের সময় 

ডিসেম্বর থেকে ফ্রেব্রুয়ারী এই তিনমাস খেজুর গুড়ের প্রাকৃতিক যোগান, যার উপর নির্ভর করে বাংলায় কয়েকটি রাজ্যে তৈরি হয় নলেন পাটালি গুড়। উৎকৃষ্ট মানের রস আরও কম সময়ের জন্য পাওয়া যায় - ডিসেম্বর ১০ তারিখ থেকে এর পর মাত্র ৬০ দিন। 

 

উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে আবহাওয়ার গতি শীতের মেয়াদ অনুযায়ী একটি গাছ থেকে দৈনিক প্রায় চার কেজি উৎকৃষ্ট মানের রস পাওয়া যেত। বর্তমানে সেই পরিমান আড়াই থেকে তিন কেজি তে ঠেকেছে। একটি খেজুর গাছ প্রায় ৪০ থেকে ৫০ বছর পর্যন্ত রস উৎপাদন করতে সক্ষম।

খেজুর রস থেকে গুড় তৈরি করার পদ্ধতি 

যত শীত পরে রসের স্বাদ ততো ভালো হয়। একবার কাটার পর পরপর তিন দিন রস মেলে। প্রথম দিনের

রসকে বলা হয় জিরেনকাট, যা সব থেকে সুস্বাদু। দ্বিতীয় তৃতীয় দিনের রস কে যথাক্রমে বলা হয় ডোকাট তেকাট। খুব ভোর থেকে এই রসকে জ্বাল দিয়ে গুড় বানানোর কাজ শুরু করতে হয়। এই কাজের জন্য শিউলিরা খেজুর গাছের কাছেই ফাকা মাঠে খেজুর পাতায় আগুন জ্বালিয়ে গুড় বানানোর কাজ করে থাকে।



খেজুর / নলেন গুড়ের উপকারিতা

- ওজন কমাতে সাহায্য করে।

- ঠান্ডায় কাশি সর্দি নিরাময় করে।

- হজম শক্তি বাড়িয়ে তোলে পেট পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে।

- খেজুর গুড় খেলে শরীরে আইরন এর ঘাটতি দূর হয়। 

- লিভার ভালো রাখে, শরীরকে শক্তিশালী সতেজ করে তোলে।

- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।

- আজমা দূর করে।

- ত্বক কে ভালো রাখে।

যে স্থান গুলিতে ভালো মানের খেজুর গুড় পাওয়া যায়  

উত্তর দিনাজপুর জেলা :

দিনাজপুর জেলায় কুনোর গ্রাম, কালিয়াগঞ্জ ব্লকে আশ্রমপাড়া নামক একটি জায়গা আছে, যেখানে বংশ পরম্পরায় খেজুর গুড়ের ব্যবসা করে চলে আসছে অনেক পরিবার। এলাকায় পুরুষ সদস্যদের সাথে সাথে মহিলারাও এই ব্যাবসায় সহযোগিতা করেন। কুনোর গ্রামের  সুস্বাদু গুড়, পাটালি শুধুমাত্র পাশের জেলা নয় এমন কি কলকাতা সুদূর অন্য রাজ্যেও পৌঁছে যায়। 

জলপাইগুড়ি জেলা :

বর্তমানে উত্তর বঙ্গের কোনো অঞ্চলকে খেজুর গুড়ের জন্য দক্ষিণ বঙ্গের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয় না। গজলডোবায় নলেন গুড়ের ব্যবসা বেশ রমরমা। বহু পরিবার এই ব্যাবসার সঙ্গে যুক্ত। এখানকার গুড় পাশের জেলা নয় কলকাতা সহ অন্য রাজ্যেও পৌঁছে যাচ্ছে। 

 

মালদা জেলা :

যাত্রাভাঙ্গা গ্রাম পঞ্চায়েত এর দুর্গাপুর গ্রাম।

বামনগোলা, হবিবপুর এইসব ব্লকে প্রচুর খেজুর গাছ রয়েছে। 

এছাড়া রয়েছে দুই ২৪ পরগনা, নদীয়া মুর্শিদাবাদ জেলার বসিরহাট, মোছলন্দপুর, জয়নগর লালগোলা। 

নলেন গুড় অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট 

এক কেজি ভালো মানের গুড়ের জন্য থেকে কেজি রসের প্রয়োজন। বাজারে ভালো মানের গুড়ের দাম ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। সুন্দর বন ২৪ পরগনা জেলার একটি সার্ভেতে জানা গিয়েছে যে পশ্চিমবঙ্গে ধানের পরেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন অর্থকরী ফলের গাছ হল খেজুর। 


খেজুর নলেন গুড় থেকে তৈরি হওয়া খাবারের তালিকা 

গুড়ের সন্দেশ 

গুড়ের রাসাগোল্লা 

গুড়ের পায়েস 

গুড়ের মিষ্টি দই 

পিঠা, পুলি, পাটিসাপ্টা, লাড্ডু, কেক, মোয়া।

(খেজুর নলেন গুড়ের বিভিন্ন খাবার আমাজন বা ফ্লিপকার্ট থেকেও অনলাইন পাওয়া যাচ্ছে।)

বর্তমানে বিশেষ আকর্ষণ নলেন গুড়ের চা।

নলেন গুড় তার সঙ্গে সম্পর্কিত কর্ম সংস্থান 

সরকারি বিভিন্ন বেসরকারি উদ্যোগে হাজারো ভেজাল থেকে আলাদা করে খাঁটি স্বাস্থ্য সম্মত খেজুর গুড় উৎপাদন করার জন্য শিউলি গাছি দের প্রশিক্ষণ এর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। স্কিল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম এর আওতাই ৪০০ থেকে ৫০০ জন ক্ষুদ্র চাষী খেজুর মালিকদের নিয়ে সমবায় পদ্ধতিতে গুড় তৈরি বিপননের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। 

নালেন গুড়ের ইতিহাস সাহিত্য সিনেমা 

ইতিহাসবিদ নিহার রঞ্জন রায়ের 'বাঙালির ইতিহাস আদিপর্ব ' থেকে জানা যায় ৮০০ বছর আগে 'সদুক্তিকণামৃত' তে নলেন গুড়ের ভুয়সী প্রশংসা রয়েছে। সত্তর দশকের অমিতাভ বচ্চন, নুতন, পদ্মা খান্না অভিনীত 'সৌদাগর' ছবি এখনো সকলের কাছে সমান ভাবে সমাদৃত, যা শিউলি দের জীবন জীবিকা নিয়ে চিত্রায়িত।

উপসংহার 

তাই পরিশেষে ভেজাল বা সস্তার গুড় থেকে বিরত থাকুন, ন্যায্য দামে খাঁটি খেজুর গুড়ের সন্ধানে থাকুন। আর খাঁটি গুড় চিনবেন কিভাবে? গুড় খাঁটি হলে হালকা চাপ দিলেই ভেঙে যাওয়ার কথা। আলতো করে আঙুলের চাপ দিলেই যদি গুড় ভেঙে যায়, তাহলে বুঝবেন সেই পাটালি গুড় খাঁটি। খেজুর গুড়ের গন্ধ আপনার মন জুড়িয়ে দেবে এটা যেমন সত্যি, তেমনই সত্যি হলো গন্ধ শুঁকেই মজে গেলে হবে না। কারণ আসল গন্ধ না বুঝে কিনে ফেললে ঠকে যাওয়ার ভয় থাকতে পারে। অনেক সময় গুড়ের কৃত্রিম সুবাস আনার জন্য রাসায়নিক মেশানো হয়। তাই গন্ধ শুঁকেই সেই গুড় খাঁটি বলে ধরে নেবেন না।

 

আর শীত মানেই বাঙালির পুলি পিঠে, পাটিসাপ্টা, মালপোয়া, পায়েস আর মনের মধ্যে গান ধরা।

খেজুর গাছে হাঁড়ি বাঁধো মন

খেজুর গাছে হাঁড়ি বাঁধো মন,

নইলে রস গড়িয়ে,

নইলে রস গড়িয়ে গোড়া পচে 

অকালে হবে মরণ

খেজুর গাছে হাঁড়ি বাঁধো মন

খেজুর গাছে হাঁড়ি বাঁধো মন।