মরসুমে কেনাকাটা লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
মরসুমে কেনাকাটা লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

শীতের জ্যাকেট ২০২৫-২০২৬ : উষ্ণতা ও ফ্যাশনের মিলন সঙ্গে নতুন ট্রেন্ডিং | Edik Odik

শীত ও শীতের জ্যাকেট

ডিসেম্বর শেষ শুরু হতে চললো, সামনে আসছে নতুন বছর, ২০২৬। বাংলার বুকে হালকা হালকা ঠান্ডা উঠতে শুরু করেছে। বাংলার ছয় ঋতুর মধ্যে শীত এমন একটি ঋতু, যা আমাদের জীবনযাত্রায় বিশেষ আনন্দ ও পরিবর্তন আনে। সাধারণত নভেম্বরের শেষ দিক থেকে মার্চের প্রথম পর্যন্ত শীতের প্রভাব দেখা যায়। সকালবেলায় কুয়াশায় ঢাকা মাঠ, শিশিরে ভেজা ঘাস, আর উত্তরের হিমেল হাওয়া—সব মিলে প্রকৃতির এক অনন্য রূপ ধারণ করে। যদিও শীত অনেকের কাছে প্রিয় সময়, তবুও এই সময়ের ঠান্ডা থেকে রক্ষা পাওয়াটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এখানেই আসে শীতের অন্যতম সঙ্গী—জ্যাকেট।


নামি কোম্পানির কিছু দামি জ্যাকেট :

অনলাইন বা মল বা দোকানে কিনতে পারেন :

Allen Solley (Rs. 1500/- to Rs. 2500/-)

Boldfit (Rs. 1200/- to Rs. 2000/-)

Jack & Jones (Rs. 1200/- to Rs. 2500/-)

Columbia (Rs. 3600/- to Rs. 8600/-)

Dollar (Rs. 1200/- to Rs. 2000/-)

Duke (Rs. 1500/- to Rs. 3000/-)

Lee (Rs. 1500/- to Rs. 2500/-)

L'monte (Rs. 4500/- to Rs. 6500/-)

Nike (Rs. 6000/- to Rs. 8000/-)

Puma (Rs. 3000/- to Rs. 4000/-)

Wildcraft (Rs. 4500/- to Rs. 5500/-)

Woodland (Rs. 5000/- to Rs. 6000/-)

Wrangler (Rs. 2400/- to Rs. 4000/-)


শীতের জ্যাকেটের প্রয়োজনীয়তা

জ্যাকেটের ধরন

জ্যাকেটের আকর্ষণীয় ইতিহাস

শীতের জ্যাকেটের আকর্ষণ

২০২৫-২০২৬ শীতের জ্যাকেট ট্রেন্ড

জ্যাকেটের সবচেয়ে জনপ্রিয় রং কোনগুলো


স্বল্প বাজেটের মধ্যে জ্যাকেট:

কিছুদিন আগে বাজারে গিয়ে দেখলাম ফুটপাতের উপরে ঢেলে জ্যাকেট বিক্রি হচ্ছে, দাম ৫০০ টাকা প্রতি পিস। ভিড় ভালোই ছিল, কিন্তু খুঁত খুঁতে মন কোথাও কোয়ালিটি এর সঙ্গে সমঝোতা করতে চায় না। তাই অনলাইন ঘাটা ঘাঁটি শুরু করলাম। Messho থেকে বর্তমান সময়ের ট্রেন্ডিং জ্যাকেট খুব সস্তায় পাওয়া যাচ্ছে, নিচে কিছু জ্যাকেটের লিংক দিয়ে দেয়া হল, ক্লিক করে দেখে নিতে পারেন। আসা করি পছন্দ হবে। Meesho থেকে (৩০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে জ্যাকেট পাওয়া যাচ্ছে।) Meesho Link 


শীতের জ্যাকেটের প্রয়োজনীয়তা:

শীতের জ্যাকেট কেবল সাধারণ পোশাক নয়, বরং এটি আমাদের শরীরের উষ্ণতা রক্ষার এক কার্যকর মাধ্যম। ঠান্ডায় শরীরের তাপমাত্রা কমে গেলে নানা অসুখ-বিসুখের ঝুঁকি বাড়ে, যেমন সর্দি, কাশি বা জ্বর। জ্যাকেট শরীরকে ঠান্ডা বাতাস থেকে রক্ষা করে, সেই সঙ্গে আরামও দেয়। আগে শীতের পোশাক বলতে মূলত সোয়েটার, চাদর ও কম্বল বোঝানো হতো। কিন্তু আধুনিক জীবনযাত্রায় জ্যাকেট এক অপরিহার্য পোশাক হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে।


জ্যাকেটের ধরন:

জ্যাকেটের ধরন আজকাল নানা রকম—কটনের, উলের, লেদারের, এমনকি জলরোধী নাইলনের জ্যাকেটও পাওয়া যায়। পাহাড়ি বা তীব্র ঠান্ডা এলাকায় মানুষ যেখানে দিব্যি থার্মাল জ্যাকেট পরে থাকে, শহুরে জীবনে সাদামাটা ফ্যাশনেবল জ্যাকেট যথেষ্ট আরাম দেয়। অনেক জ্যাকেটের সঙ্গে হুড বা ক্যাপ যুক্ত থাকে, যা মাথা ও কান ঠান্ডা থেকে রক্ষা করে। আবার কেউ কেউ রঙিন, ট্রেন্ডি জ্যাকেট পরেন ফ্যাশনের অংশ হিসেবে। আজকের তরুণ প্রজন্মের কাছে শীতের জ্যাকেট স্টাইলের এক প্রতীকও বটে।


জ্যাকেটের আকর্ষণীয় ইতিহাস:

জ্যাকেটের ইতিহাসও বেশ আকর্ষণীয়। ইউরোপে ঠান্ডা আবহাওয়ার কারণে শত শত বছর আগে থেকেই এটি ব্যবহৃত হচ্ছে। ধীরে ধীরে এ পোশাকটি বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ভারতীয় আবহাওয়ায় যখন ঠান্ডা কম থাকে, তখনও ফ্যাশনের অংশ হিসেবে অনেকেই জ্যাকেট পরতে ভালোবাসে। এর ব্যবহার এখন কেবল শীতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; অনেকেই হালকা জ্যাকেট ব্যবহার করে মোটরবাইক চালানোর সময় বা রাতে বাইরে বেরোলে।


শীতের জ্যাকেটের আকর্ষণ:

গ্রামের দিকে শীত পড়লেই মানুষজন আগুন জ্বালিয়ে আলাপ-আলোচনা করার এক বিশেষ রীতি দেখা যায়। এটা বড়োই আনন্দ ও সুখকর একটা দৃশ্য। তখন সবাই গায়ে জ্যাকেট, চাদর বা মোটা কাপড় জড়িয়ে বসে থাকে। শহরে শীতের সকাল মানেই উলের পোশাকে সাজানো মানুষ, হাতে গরম চা বা কফির কাপ। এই সময়েই শীতের জ্যাকেট মানুষের চেহারায় আনে এক উজ্জ্বল সৌন্দর্য।


২০২৫-২০২৬ শীতের জ্যাকেট ট্রেন্ড:

লেদার জ্যাকেটের প্রত্যাবর্তন বিশেষভাবে অ্যাভিয়েটর এবং বম্বার স্টাইল, যা ইন্ডিয়ান স্কিন টোনের সাথে ক্যামেল, ক্রিম, নেভি, অলিভ এবং বার্গান্ডি কালারে লেয়ারিংয়ের জন্য উপযোগী।


সোয়েড এবং অ্যানোরাক জ্যাকেট রেইনি দিনের জন্য স্পোর্টি লুক দেয়, সাথে সোয়েটার ওয়েস্ট এবং টেক্সচার্ড নিটস ট্রেন্ডিং।


ইন্ডিয়ায় বাজেট-ফ্রেন্ডলি হুডি-স্টাইল এবং প্রিমিয়াম চাইনিজ ওভারকোট মডার্ন ডিজাইনে জনপ্রিয়, বিশেষ করে Myntra, Flipkart-এ


ইন্ডিয়ান কনটেক্সটে ট্রেন্ডইন্ডিয়ার মাইল্ড ঠান্ডায় লেয়ারিং ফর্মুলা যেমন থার্মাল+নিট+জ্যাকেট কাজ করে, সলিড কালার এবং মিনিমালিস্ট ডিজাইন স্ট্রিটওয়্যারে চলছে।


শীতের জ্যাকেটের সবচেয়ে জনপ্রিয় রং কোনগুলো ২০২৫-২৬

২০২৫-২৬ শীতের জ্যাকেটের সবচেয়ে জনপ্রিয় রংগুলো হলো: ক্যামেল, ক্রিম, নেভি, অলিভ, বার্গান্ডি, এবং ক্লাসিক ব্ল্যাক। এই রংগুলো আধুনিক এবং গতানুগতিক উভয় ধরনের পোশাকে সহজে মানিয়ে যায় এবং স্ট্রিট ফ্যাশনে বেশ ট্রেন্ডি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এছাড়া সাদামাটা এবং নরম রং যেমন গ্রে ও মাটিরসুরতিও জনপ্রিয়তা পাচ্ছে, যা বিভিন্ন ধরনের লেয়ারিংয়ের সঙ্গে পরতে সুবিধাজনক।


পরিশেষে:

সব শেষে বলা যায়, শীতের সৌন্দর্য যেমন মন ছুঁয়ে যায়, তেমনি এর শীতল কামড়ও অবহেলা করা যায় না। তাই শীতের আনন্দ উপভোগ করতে হলে শরীরের যত্ন নেওয়া জরুরি। সেই যত্নের অন্যতম অংশ হলো যথাযথ শীতের পোশাক পরা—বিশেষ করে একটি উষ্ণ ও আরামদায়ক জ্যাকেট। শীতের সকালের কুয়াশা, দুপুরের রোদ আর সন্ধ্যার হিমেল হাওয়া তখন আরও উপভোগ্য হয়ে ওঠে একটি জ্যাকেটের আশ্রয়ে।

শীত পড়ছে! আসছে ২০২৬ সাল এখন ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াবেন যেসব খাবারের মাধ্যমে

যে খাবার যেভাবে খাবেন 


টমেটো:

টমেটোতে থাকা উপাদান ত্বককে সূর্যের ক্ষতি থেকে রক্ষা, সতেজ ও মসৃন করে। টমেটো মূলত ভিটামিন, খনিজ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর একটি পুষ্টিকর ফল/সবজি, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা, হৃদ্‌স্বাস্থ্য, ত্বক ও চোখের জন্য বিশেষ উপকারী। সকালে খালি পেটে টমেটোর রস পান করুন। এছাড়া টমেটোর রস চালের গুঁড়ি দিয়ে মুখে ১০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এটি প্রকৃতির টোনার হিসেবে কাজ করে। 



গাজর :

ইজের কোষ দেহনের, ত্বক পরিমাৎ উজ্জ্বল করা ও ত্বকের শুভতা কমাতে সহায্য করে। 


(প্রতিদিন রাসায়নিকযুক্ত চিকিৎসা বা সাপ্লিমেন্টের পেছনে ছুটছেন? সেসব ছেড়ে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন। )

- ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বৃদ্ধি করে  

- সেল রিজেনারেশন বাড়িয়ে ত্বকের টোন ও টেক্সচার উন্নত করে ।

- অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও বিটা-ক্যারোটিন থাকার কারণে ত্বককে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা করে ।

- ত্বকের শুষ্কতা ও জ্বালা কমায়, হাইড্রেটেড রাখে ।

- প্রাকৃতিক সূর্য সুরক্ষা প্রদান করে, রোদে পোড়া বা ট্যান কমাতে সাহায্য করে।  

- বার্ধক্যজনিত সমস্যা যেমন বলিরেখা ও সূক্ষ্ম রেখা কমিয়ে তরুণত্ব ধরে রাখে।  

- ব্রণ ও দাগ কমাতে সাহায্য করে। 

- ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা ও দৃঢ়তা বজায় রাখতে কোলাজেন উৎপাদন উজ্জীবিত করে। 

- ত্বকের ডিটক্সিফিকেশন এবং চিকিৎসা প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে।  

- গাজরের তেলের নিয়মিত ব্যবহার ত্বকের স্বাস্থ্য বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।  

সকালে এক থেকে দুটি গাজরের রস পান করুন। এছাড়া গাজর সেদ্ধ করে সবজির সঙ্গে বা স্যালাড হিসেবে খেতে পারেন।


পেঁপে:

পেঁপেতে থাকা এঞ্জাইম পাপেইন প্রোটিন ভাঙ্গতে সাহায্য করে, যা হজমে সহায়ক এবং কোষ্ঠকাঠিন্য কমায়। এছাড়া পেঁপেতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং পটাসিয়াম থাকে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, প্রদাহ কমায়, হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায় এবং ত্বক ও অন্ত্রের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে। ওজন নিয়ন্ত্রণে ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেও পেঁপে উপকারী ভূমিকা পালন করে। এই সব কারণেই পেঁপে স্বাস্থ্য রক্ষায় খুবই কার্যকরী ফল।


 নিয়মিত তাজা পেঁপে খাওয়ার পাশাপাশি পেপের পেশী মুখে ১০ থেকে ১৫ মিনিট মতো রেখে জল অমোদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।


লেবু :

লেবু ত্বকের জন্য অনেক উপকার করে। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং সাইট্রিক অ্যাসিড থাকে যা ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করে। লেবু ত্বককে উজ্জ্বল করে, ব্রণ ও পিম্পল কমায়, ছিদ্র শক্ত করে এবং ত্বকের মৃত কোষ দূর করে নতুন কক্ষে সৃজন বাড়ায়। এটি তৈলাক্ত ত্বকের জন্যও উপকারী, কারণ লেবু অতিরিক্ত তেল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এছাড়া লেবু বয়সের দাগ, কালো দাগ হালকা করতে এবং ত্বকের কোলাজেন উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করে, যা বার্ধক্যরোধক হিসেবে কাজ করে। তবে সরাসরি ব্যবহারে সতর্কতা থাকতে হবে কারণ লেবু সরাসরি ত্বকে প্রয়োগ করলে খুশকিতে পড়তে পারে 


লেবুর ত্বকের উপকারিতা সংক্ষেপে:

- ত্বক উজ্জ্বল করেব্রণ ও পিম্পল কমায়

- ছিদ্র শক্ত করে এবং তৈলাক্ততা নিয়ন্ত্রণ করে

- মৃত ত্বক এক্সফোলিয়েট করে

- বয়সের দাগ ও কালো দাগ হালকা করে

-কোলাজেন বৃদ্ধি করে, বার্ধক্যরোধে সাহায্য করে


ব্যবহারের সতর্কতা:

লেবুর রস খুব বেশি ব্যবহারে ত্বকে জ্বালা বা শুষ্কতা হতে পারে 

সংবেদনশীল ত্বকে ব্যবহার করার আগে সতর্কতা জরুরিলেবুর রসকে জল বা মিশ্রণের মাধ্যমে পাতলা করে ব্যবহার করা উচিত।


আপনি যদি লেবু ত্বকে ব্যবহার করতে চান, তবে প্রথমে ছোট অংশে পরীক্ষা করে দেখুন এবং প্রয়োজনে ত্বকের বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।


মুখে লেবুর রস ও মধু ব্যবহার করতে পারেন। এ ছাড়া স্যালাড বা ভাল যেকোনও সবজির ওপর লেবুর বস দিয়ে খেতে পারেন। 


হলুদ 

হলুদ হলুদ ত্বকের ব্রণ নিস্তেজতা কমাতে সাহায্য করে।

প্রতিদিনের হলুদ ব্যবহারের পাশাপাশি দুধে একটু হলুদ মিশিয়ে পান করতে পারেন, যা স্বাস্থ্য ও ত্বক উভয়ের জন্য ভালো। এছাড়া হলুদ ও দইয়ের সঙ্গে মাখিয়ে ব্যবহার করা যায়।


ত্বকের উপরে হলুদের উপকারের তালিকা নিচে দেওয়া হলো:

-প্রদাহ কমায় এবং ফুসকুড়ি দূর করে

-ত্বককে উজ্জ্বল ও দীপ্তিময় করে

-ময়িশ্চারাইজ করে ও শুষ্ক ত্বক নরম করে

-ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ করে ত্বকের সংক্রমণ কমায়

-ক্ষত বা দাগ দ্রুত সেরে ত্বক মসৃণ করে

-উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং ত্বকের রঙ উন্নত করে

-বয়সের ছাপ কমাতে সাহায্য করে

-ত্বকের তৈলাক্ততা নিয়ন্ত্রণ করে

-মেলানিন কমিয়ে ব্রণ রোধে সহায়ক


এই সুবিধাগুলো হলুদের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি গুণাবলীর জন্য সম্ভব হয়।



পালংশাক: 

পলাশকে ত্বক সতেজ ও উজ্জ্বল দেখাতে সাহায্য করে। 


এটি স্যালাড সুপ্, স্মৃদিতে মিশিয়ে খাওয়া যায় । 


ত্বকের উপর পালং শাকের উপকারের তালিকা নিম্নরূপ:

-ত্বককে নরম ও মসৃণ করে

-অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে 

-বয়সের ছাপ কমায়

-প্রদাহ কমিয়ে ত্বকের লালচে ভাব দূর

- করেময়শ্চারাইজ করে ত্বককে হাইড্রেটেড রাখে

-ত্বকের দাগ ও বিবর্ণতা কমাতে সহায়ক

-গ্লো বাড়ায় এবং ত্বককে উজ্জ্বল করে

-ত্বকের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ সরবরাহ করে

-ক্ষত নিরাময়ে সাহায্য করে

-সূর্যের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে ত্বককে রক্ষা করে


এই সুবিধাগুলো পালং শাকের সমৃদ্ধ ভিটামিন, মিনারেল, এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদানের কারণে সম্ভব হয়।


সত্যি বলতে, এই শীতের দিনে হয়েক সবজি পাতে রাখতে হবে। তাহলেই অনেকটা চিন্তা মুক্তি সম্ভব।

Winter 2026: হারহিম শীতে রুম হিটার ব্যবহার করছেন? কিছু সতর্কতা


জবর শীত। পারদ দিনকে দিন নামতেই থাকছে। শীতে জবুথবু। হাড়হিম শীতের আরাম যেমন লেপ-কাঁথা, তেমনি রুম হিটার। এখন বাজারে ও অনলাইন এ আকছার পাওয়া যায় রুম হিটার। সুতরাং আপনি কি শীতের শুরু থেকেই রুম হিটার ব্যবহার করতে শুরু করে দিয়েছেন কি ? 


রুম হিটার চটজলদি ঘর গরম করলেও নিয়মিত ব্যবহারে কিন্তু শরীরে বাসা বাঁধতে পারে কঠিন রোগ। তাই ব্যবহার বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকতেই হবে। 



প্রথমত, হিটার থেকে গরম বাতাস বেরিয়ে আসে। এর ফলে ঘরের আর্দ্রতা কমে যায় ভীষণভাবে। এমনকী, ঘরের মধ্যের অক্সিজেন এর মাত্ৰা অনেকটাই কমে যায়। তাই, রুম হিটার ব্যবহারে যে নিয়মগুলো আমাদের মেনে চলতে হবে- 


Bhojpuri Song 2025 Bhojpuri Song 2025: এটা ছাড়া শীতের পিকনিকে মজা পাওয়া যায় না।

আর্দ্রতা বজায় রাখতে ঘরে জল রাখুন 

হিটার চালালে ঘরের আর্দ্রতা কমে যায়, যা ত্বক ও শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এই সমস্যা দূর করতে ঘরে একটি জলভর্তি পাত্র রাখতে হবে। আর্দ্রতা বজায় থাকবে। হিটার থেকে যে গরম বাতাস বের হয়, তা ত্বককে অত্যন্ত রুক্ষ ও শুষ্ক করে দেয়। 


হিটারের কারণে অনিদ্রা, মাথাব্যথার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। কনভেনশান হিটার, হ্যালোজেন হিটার অত্যাধিক ব্যবহারে ব্যক্তিকে অসুস্থ করে তুলতে পারে। 


বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখুন 

হিটার ব্যবহারের সময় জানালা বা দরজা সামান্য হলেও খোলা রাখুন, যাতে বাতাস চলাচল করতে পারে। অক্সিজেনের ঘাটতি না হয়। শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা থাকলে হিটার থেকে দূরে থাকুন। 


শ্বাসকষ্টে ভোগা রোগীরাও এই যন্ত্রের কারণে সমস্যায় পড়তে পারেন। হিটারের বাতাস রোগীর ফুসফুসে কফ জমাতে শুরু করে। এই কারণে হাঁচি-কাশি হতে পারে। ফুসফুসে জমে থাকা কফ শুকিয়ে নানা সমস্যা দেখা দেয়। 


আগুন থেকে রুম হিটার দূরে রাখুন 

হিটারটি এমন জায়গায় রাখুন যেখানে কাপড়, কাগজ বা অন্য দাহ্য বস্তু কাছাকাছি না থাকে। হিটার চালানোর আগে নিশ্চিত করুন যে বৈদ্যুতিক সংযোগটি ঠিক আছে এবং হিটারটি নির্ধারিত তাপমাত্রায় কাজ করছে কিনা।


শিশু ও পোষ্যের থেকে দূরে রাখুন 

রুম হিটার শিশু ও পোষ্য প্রাণীদের নাগালের বাইরে রাখুন, যাতে দুর্ঘটনা না ঘটে। যে বাড়িতে গ্যাস হিটার বা এলপিজি হিটার বেশি ব্যবহার করা হয়, সেসব পরিবারের শিশুদের মধ্যে অ্যাজমার সমস্যা সাধারণত বেশি দেখা যায়। এছাড়া কাশি, হাঁচি, বুকে ঘড়ঘড় শব্দ ও ফুসফুসের ক্ষতির লক্ষণ বেশি দেখা যায় এসব পরিবারেই। কারণ, এই হিটার থেকে কার্বন ডাইঅক্সাইড বেরোয়। যা ছোট ছোট বাচ্চা ও বয়স্কদের স্বাস্থ্যের ওপর কুপ্রভাব ফেলে।


রুম হিটার দীর্ঘ সময় না চালানো 

রুম হিটার দীর্ঘ সময় চালাবেন না। অতিরিক্ত হিটার চালালে নানা সমস্যা হতে পারে। এছাড়া রুম হিটার নিয়মিত পরিষ্কার এবং রক্ষণাবেক্ষণ করুন, যাতে যান্ত্রিক কোনো গোলোযোগ না হয়। 


প্রতিদিন হিটার ব্যবহারে যা হয় 

কাশি, মাথাব্যথা, বমি বা গা গোলানো, চোখ শুকিয়ে যাওয়া, নাক বন্ধ হওয়া, শ্বাস-প্রশ্বাস সংক্রান্ত সমস্যা বাড়ে, অ্যাজমার রোগীদের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। যদি হিটার ব্যবহার করতেই হয়, তাহলে কিছু সাবধানতা মেনে চলা ভালো। এই নিয়মগুলো মেনে চললে আপনি শীতে আরামদায়ক এবং নিরাপদ থাকতে পারবেন।

রায়গঞ্জের তুলাইপাঞ্জি চাল অতুলনীয় স্বাদ ও সুগন্ধির জন্য বিশ্ব বাজারে সমাদৃত, কি এর গুণাবলী? কত চাষ হয়?

"তুলাইপাঞ্জি" নামটি দুটি বাংলা শব্দ থেকে এসেছে: “তুলাই” যার অর্থ কোমল বা হালকা এবং “পাঞ্জি” যার অর্থ চাল। এই জাতটির একটি দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে এবং এটি শতাব্দী ধরে পশ্চিমবঙ্গে চাষ করা হয়ে আসছে, যার বৈশিষ্ট্যগুলি স্থানীয় রন্ধনপ্রথায় অঙ্গীভূত হয়েছে।


Pic: Amazon

তুলাইপাঞ্জিকে 'অ-বাসমতি সুগন্ধি চাল' হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে। এটির গড় দৈর্ঘ্য 5.5 মিমি, দৈর্ঘ্য/প্রস্থ অনুপাত 3.4 এবং প্রসারণ অনুপাত 1.6 সহ মাঝারি-লম্বা সরু দানা রয়েছে। 


এই জিআই ট্যাগ করা প্রাচীন লোক চাল 2012 লন্ডন অলিম্পিকে আমাদের অপরাজেয় রন্ধন সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্ব করেছিল! তুলার (তুলন) মতো সুগন্ধি এবং নরম, এটাই তুলাইপাঞ্জির অর্থ এবং স্বাদ। এর সুগন্ধি এই অ-বাসমতী ভাতকে পুলাও, ভাজা ভাত, বিরিয়ানি এবং পিঠে, পায়েশের মতো মিষ্টান্ন এবং স্থানীয় সুস্বাদু খাবারের জন্য একটি দুর্দান্ত পছন্দ করে তোলে। আমরা প্রায়শই এটি আমাদের রোজের চাল (আমাদের প্রতিদিনের চাল) হিসাবেও ব্যবহার করি।


রান্না করা ভাত খুব সুস্বাদু, গঠনে ভালো, চেহারায় উজ্জ্বল, উচ্চ অ্যামাইলোসকন্টেন্টের কারণে আঠালো নয় এবং ভঙ্গুর। তুলাইপাঞ্জিতে রয়েছে অ্যামাইলোজ- ২৮.৩%, প্রোটিন-৭.৩%। 


সম্প্রতি, তুলাইপাঞ্জি চাল তার বিশেষ সুগন্ধ এবং স্বাদের পাশাপাশি পুষ্টিগত উপকারিতার জন্যও বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। এটি বিশেষত বাংলা রন্ধনশৈলীতে ব্যবহৃত হয়, যেমন পিঠে (চাল কেক) এবং পায়েস (মিষ্টি চালের পুডিং)।


এই চালটি তার মৃদু, বাদামী স্বাদ এবং সুগন্ধের জন্য পরিচিত, যা যে কোনও রান্নায় যোগ করলে তা উন্নত হয়ে ওঠে।


তুলাইপাঞ্জি চালের উপকারিতা:

তুলাইপাঞ্জি চালের বেশ কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে, যা স্বাস্থ্য-conscious মানুষদের জন্য এটি একটি ভালো পছন্দ করে তোলে। এটি থায়ামিন, নাইসিন, ভিটামিন B6, আয়রন এবং ম্যাগনেসিয়ামের মতো অপরিহার্য পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ। 


চালটিতে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি শরীরের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে সহায়ক, যার ফলে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং কিছু ক্যান্সারের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমে যেতে পারে। এছাড়াও, এর উচ্চ ফাইবার কন্টেন্ট পাচন প্রক্রিয়াকে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সহায়ক।


তুলাইপাঞ্জি চালের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা হল এর নিম্ন গ্লাইসেমিক সূচক। যেসব খাবারের গ্লাইসেমিক সূচক কম, তা ধীরে ধীরে হজম হয় এবং রক্তে শর্করা বাড়ানোর হার ধীর হয়। এর ফলে, এটি ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে এবং খাওয়ার পর দীর্ঘ সময়ের জন্য তৃপ্তি অনুভূতি বজায় রাখে। আরও কী, তুলাইপাঞ্জি চাল প্রাকৃতিকভাবে গ্লুটেন-মুক্ত, যা সেলিয়াক রোগ বা গ্লুটেন সহনশীলতা সমস্যাযুক্ত মানুষের জন্য উপযোগী।


কিছু গবেষণায় এও প্রমাণিত হয়েছে যে, তুলাইপাঞ্জি চালের উপাদানগুলি কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করতে পারে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি আরও কমিয়ে দিতে পারে। তবে, মনে রাখা উচিত যে তুলাইপাঞ্জি চালের স্বাস্থ্য উপকারিতাগুলি সম্পর্কে আরও গবেষণা প্রয়োজন। যে কোনো খাবারের মতো, এটি সুষম ডায়েটের অংশ হিসেবে পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত।


উৎপাদনের সময় সীমা :

ঐতিহ্যগতভাবে, তুলাইপাঞ্জি অগাস্ট-ডিসেম্বর সময়কালে বর্ষা মৌসুমের পরে মধ্য-জমি থেকে উঁচু জমিতে এবং বিশেষ করে পাট কাটা ক্ষেতে কোনো সার ব্যবহার না করেই চাষ করা হয়। কম মাটির উর্বরতা এবং আর্দ্রতার চাপ সাধারণত ক্রমবর্ধমান ক্ষেত্রে বিরাজ করে এবং সুগন্ধের পিছনে মূল কারণ বলে বিশ্বাস করা হয়। 


অজৈব সার সাধারণত এই চাল এর সুগন্ধ এবং অন্যান্য গুণগত মান কমিয়ে তোলে আর এই কারণে অজৈব সার তুলাইপাঞ্জি উৎপাদনে ব্যবহার করা হয় না।


সাল অনুসারে ফলন :

বর্তমানের তথ্য অনুযায়ী খাদ্যরসিকদের জন্য সুখবর। উত্তর দিনাজপুরে জেলার একমাত্র নিজস্ব দেশি ধান তুলাইপাঞ্জি উৎপাদনে রেকর্ড উৎপাদন গড়লেন কৃষকরা। ২০২৪ সালের খারিফ মরশুমে সর্বাধিক বেশি তুলাইপাঞ্জির ফলন হয়েছে উত্তর দিনাজপুরে। 


শুধুমাত্র রায়গঞ্জ রায়গঞ্জ মহকুমার নির্দিষ্ট কৃষিজমিতে সুস্বাদু, সুগন্ধে অতুলনীয় তুলাইপাঞ্জি ধান চাষের সুযোগ সীমাবদ্ধ। জেলাজুড়ে প্রায় ২ লক্ষ ৬ হাজার হেক্টর কৃষিজমিতে উচ্চ ফলনশীল আমন ধান চাষ হয়েছিল। তার মধ্যে ১২ হাজার হেক্টর জমিতে তুলাইপাঞ্জি ধান চাষ করেছিলেন ২২ হাজার ৩০০ কৃষক।  


২০২১ সালের থেকে অন্তত ৬ হাজার মেট্রিন টন বেশি তুলাইপাঞ্জি ধান উৎপাদন হয়েছে। জেলা কৃষি দপ্তর সূত্রে জানানো হয়, 


২০১৬- ১৭ অর্থবর্ষে মাত্র ৬ হাজার হেক্টর জমিতে তুলাইপাঞ্জি ধান চাষ হত। 


২০১৮-১৯ সালে তার পরিমাণ বেড়ে সাড়ে ৭ হাজার হেক্টর জমিতে তুলাইপাঞ্জির চাষ হয়। 


২০২০-২১ সালে ওই চাষের জমির পরিমাণ বেড়ে ১ হাজার হেক্টর জমিতে তুলাইপাঞ্জি আবাদ হয়েছিল। 


২০২১-২২ অর্থবর্ষে সাড়ে ৯ হাজার হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়। 


২০২১-এ ১৮ হাজার মেট্রিন টন তুলাইপাঞ্জি ফলন হয়েছিল। গত বছরের উৎপাদনকে পিছনে ফেলে ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে ১২ হাজার হেক্টর জমিতে প্রায় ২৪ হাজার মেট্রিন টন, 


২০২৩- '২৪ সালে ৩০ হাজার মেট্রিক টন তুলাইপাঞ্জির ফলন হয়েছে। 


সম্প্রতি অর্থাৎ ২০২৫ সালে ৩৬ হাজার মেট্রিক টন তুলাইপাঞ্জি ধান কৃষকের গোলায় উঠেছে বলে সংশ্লিষ্ট দপ্তর সূত্রে জানানো হয়েছে।


রাজ্য সরকারের প্রকল্প :

সুগন্ধি ধান চাষের জন্য রাজ্য সরকারের তরফে একটি প্রকল্প চালু হয়েছে। জেলার নিজস্ব তুলাইপাঞ্জি আবাদে কৃষকদের বিনামূল্যে তুলাইপাঞ্জির বীজ সরবরাহ করা হয়।


তুলাইপাঞ্জির চাহিদা গোটা পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে রয়েছে। তাই জেলার রায়গঞ্জ এবং হেমতাবাদের চাষিদের তুলাইপাঞ্জি চাষে উৎসাহ দেওয়া হয়। ফলে গত কয়েক বছরের মধ্যে তুলাইপাঞ্জির জমির পরিমাণ যেমন বেড়েছে, সেই সঙ্গে ফলনও দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। 


জেলার কৃষি দপ্তর জানিয়েছে যদিও সেই সংখ্যা বাড়বে । জেলা কৃষি অধিকর্তাদের মত অনুযায়ী, 'সুগন্ধী ধান চাষের জন্য রাজ্য সরকারের তরফে বাংলায় প্রকল্প চালু হয়েছে। জেলার নিজস্ব তুলাইপাঞ্জি আবাদে কৃষকদের বিনামূল্যে তুলাইয়ের বীজ সরবরাহ করা হয়। তুলাইয়ের চাহিদা গোটা রাজ্যে রয়েছে। তাই জেলার রায়গঞ্জ এবং হেমতাবাদের চাষিদের তুলাইপাঞ্জি চাষে উৎসাহ দেওয়া হয়। 


ফলে গত কয়েক বছরের মধ্যে তুলাইয়ের জমির পরিমাণ যেমন বেড়েছে, সেই সঙ্গে ফলনও দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। 'তুলাইপাঞ্জি ধানের জীববৈচিত্র্য যাতে কেউ চুরি করতে না পারে, সেই কারণে ২০১৭ সালে জিআই অর্থাৎ জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন-এর অন্তর্ভুক্ত হয়েছে তুলাইপাঞ্জি।' 


রায়গঞ্জ শহর সংলগ্ন কর্ণজোড়া এলাকায় তুলাই ধান ভাঙার জন্য অত্যাধুনিক যন্ত্র বসানো হয়েছে। কৃষকদের এই ধান চাষে আগ্রহ বাড়ানোর জন্য রাজ্য সরকারের তরফ থেকে একাধিক সুযোগসুবিধা দেওয়ার চিন্তাভাবনা চলছে।

শীতের মরসুম ২০২৪ : পুলি পিঠে পায়েস ও নলেন গুরের মাহাত্ম

ব্রিটানের রানী এলিজাবেথ একবার সুস্বাদু নলেন (Nalen Gur) গুড়ের পাটালি (Date Palm Jaggery Brick) খেয়ে মুগ্ধ হয়েছিলেন। শীত চলে এসেছে আর সঙ্গে বাঙালি বাড়ীতে পুলি পিঠা পায়েসের ধুম পরে গিয়েছে যার সঙ্গে নিবিড় ভাবে জুড়ে রয়েছে নলেন গুড়। 

এতে কোনো সংশয় নেই যে আজ বাংলার খেজুর (Khejur) রস থেকে গুড়, পাটালি, মিষ্টি, মোয়া, দই, কেক, আইসক্রিম ইত্যাদি একটি শিল্পের জায়গায় পৌঁছে গেছে। নলেন বা খেজুর গুড় মূলত ধরণের পাওয়া যায় তরল যা ঝোলা গুড় এবং শক্ত বা পাটালি গুড়। ১০০ গ্রাম গুড় এর মধ্যে ৩৫৫ কিলো কালোরি এনার্জি থাকে যেখানে ৮৭ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট . ৬৯ গ্রাম প্রোটিন বর্তমান।

 

এই আর্টিকেল থেকে নলেন গুড় নিয়ে আমরা যে বিষয় গুলি জানতে পারবো 

- শিউলি বা গাছি 

- নলেন গুড়ের নামকরণ 

- নলেন গুড় উৎপাদনের সময় 

- প্রকৃতির মার উৎপাদনে ঘাটতি 

- খেজুর রস থেকে গুড় তৈরি করার পদ্ধতি 

- খেজুর / নলেন গুড়ের উপকারিতা

- যে স্থান গুলিতে ভালো মানের খেজুর গুড় পাওয়া যায় 

- নলেন গুড় অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট

- খেজুর নলেন গুড় থেকে তৈরি হওয়া খাবারের তালিকা 

- নলেন গুড় তার সঙ্গে সম্পর্কিত কর্ম সংস্থান 

- নলেন গুড়ের ইতিহাস সাহিত্য সিনেমা 

- নলেন গুড়ের গান 

আরও পড়ুন : রায়গঞ্জের তুলাইপাঞ্জি চাল অতুলনীয় স্বাদ ও সুগন্ধির জন্য বিশ্ব বাজারে সমাদৃত, কি এর গুণাবলী? কত চাষ হয়? 

শিউলি বা গাছি 

খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ সেখান থেকে গুড় তৈরি করে মোটেও সহজ কাজ নয়। পৌষ মাঘ মাসের কোন কোনে ঠান্ডায় আমরা যখন লেপ মুড়ি দিয়ে আরামে ঘুমোই তখনি শুরু হয় খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করার কাজ। আর এই কাজ টি যারা করে থাকেন তাঁদের আমরা শিউলি (Siuli) বা গাছি (Gachi) বলে থাকি। যদিও অশ্বিন মাস থেকেই এই কর্মযোগ্য অর্থাৎ রস সংগ্রহ করার কাজ শুরু হয়ে যায়। সারা বছর অন্যান্য কাজ করে থাকলেও এই ছয় মাস শিউলিরা এই কাজেই মনোনিবেশ করে। যদিও এদের জীবন সংগ্রাম খুব কষ্টের এবং অনটনের। গাছি বা শিউলিরা যে সকলেই নিজের নিজের জায়গায় কাজ পান তা নয়, অনেকেই অন্য জেলায় গিয়ে কাজ করেন।

নলেন গুড়ের নামকরণ 

রুক্ষ প্রান্তরে মূলত খেজুর গাছ পাওয়া যায়। যার যত গুলো গাছ আছে, শিউলিরা চেষ্টা করেন সেগুলো রস সংগ্রহের জন্য প্রস্তুত করা। অশ্বিন কার্তিক মাসেই গাছের ওপরের অংশ চেঁছে ফেলা হয়। তারপর সেই অংশে নল ঢুকিয়ে মাটির কলসি বেঁধে দেয়া হয়। অনেকেরই ধারণা যে এই নল থেকেই নলেন গুড়ের নামকরণ।

নলেন গুড় উৎপাদনের সময় 

ডিসেম্বর থেকে ফ্রেব্রুয়ারী এই তিনমাস খেজুর গুড়ের প্রাকৃতিক যোগান, যার উপর নির্ভর করে বাংলায় কয়েকটি রাজ্যে তৈরি হয় নলেন পাটালি গুড়। উৎকৃষ্ট মানের রস আরও কম সময়ের জন্য পাওয়া যায় - ডিসেম্বর ১০ তারিখ থেকে এর পর মাত্র ৬০ দিন। 

 

উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে আবহাওয়ার গতি শীতের মেয়াদ অনুযায়ী একটি গাছ থেকে দৈনিক প্রায় চার কেজি উৎকৃষ্ট মানের রস পাওয়া যেত। বর্তমানে সেই পরিমান আড়াই থেকে তিন কেজি তে ঠেকেছে। একটি খেজুর গাছ প্রায় ৪০ থেকে ৫০ বছর পর্যন্ত রস উৎপাদন করতে সক্ষম।

খেজুর রস থেকে গুড় তৈরি করার পদ্ধতি 

যত শীত পরে রসের স্বাদ ততো ভালো হয়। একবার কাটার পর পরপর তিন দিন রস মেলে। প্রথম দিনের

রসকে বলা হয় জিরেনকাট, যা সব থেকে সুস্বাদু। দ্বিতীয় তৃতীয় দিনের রস কে যথাক্রমে বলা হয় ডোকাট তেকাট। খুব ভোর থেকে এই রসকে জ্বাল দিয়ে গুড় বানানোর কাজ শুরু করতে হয়। এই কাজের জন্য শিউলিরা খেজুর গাছের কাছেই ফাকা মাঠে খেজুর পাতায় আগুন জ্বালিয়ে গুড় বানানোর কাজ করে থাকে।



খেজুর / নলেন গুড়ের উপকারিতা

- ওজন কমাতে সাহায্য করে।

- ঠান্ডায় কাশি সর্দি নিরাময় করে।

- হজম শক্তি বাড়িয়ে তোলে পেট পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে।

- খেজুর গুড় খেলে শরীরে আইরন এর ঘাটতি দূর হয়। 

- লিভার ভালো রাখে, শরীরকে শক্তিশালী সতেজ করে তোলে।

- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।

- আজমা দূর করে।

- ত্বক কে ভালো রাখে।

যে স্থান গুলিতে ভালো মানের খেজুর গুড় পাওয়া যায়  

উত্তর দিনাজপুর জেলা :

দিনাজপুর জেলায় কুনোর গ্রাম, কালিয়াগঞ্জ ব্লকে আশ্রমপাড়া নামক একটি জায়গা আছে, যেখানে বংশ পরম্পরায় খেজুর গুড়ের ব্যবসা করে চলে আসছে অনেক পরিবার। এলাকায় পুরুষ সদস্যদের সাথে সাথে মহিলারাও এই ব্যাবসায় সহযোগিতা করেন। কুনোর গ্রামের  সুস্বাদু গুড়, পাটালি শুধুমাত্র পাশের জেলা নয় এমন কি কলকাতা সুদূর অন্য রাজ্যেও পৌঁছে যায়। 

জলপাইগুড়ি জেলা :

বর্তমানে উত্তর বঙ্গের কোনো অঞ্চলকে খেজুর গুড়ের জন্য দক্ষিণ বঙ্গের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয় না। গজলডোবায় নলেন গুড়ের ব্যবসা বেশ রমরমা। বহু পরিবার এই ব্যাবসার সঙ্গে যুক্ত। এখানকার গুড় পাশের জেলা নয় কলকাতা সহ অন্য রাজ্যেও পৌঁছে যাচ্ছে। 

 

মালদা জেলা :

যাত্রাভাঙ্গা গ্রাম পঞ্চায়েত এর দুর্গাপুর গ্রাম।

বামনগোলা, হবিবপুর এইসব ব্লকে প্রচুর খেজুর গাছ রয়েছে। 

এছাড়া রয়েছে দুই ২৪ পরগনা, নদীয়া মুর্শিদাবাদ জেলার বসিরহাট, মোছলন্দপুর, জয়নগর লালগোলা। 

নলেন গুড় অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট 

এক কেজি ভালো মানের গুড়ের জন্য থেকে কেজি রসের প্রয়োজন। বাজারে ভালো মানের গুড়ের দাম ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। সুন্দর বন ২৪ পরগনা জেলার একটি সার্ভেতে জানা গিয়েছে যে পশ্চিমবঙ্গে ধানের পরেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন অর্থকরী ফলের গাছ হল খেজুর। 


খেজুর নলেন গুড় থেকে তৈরি হওয়া খাবারের তালিকা 

গুড়ের সন্দেশ 

গুড়ের রাসাগোল্লা 

গুড়ের পায়েস 

গুড়ের মিষ্টি দই 

পিঠা, পুলি, পাটিসাপ্টা, লাড্ডু, কেক, মোয়া।

(খেজুর নলেন গুড়ের বিভিন্ন খাবার আমাজন বা ফ্লিপকার্ট থেকেও অনলাইন পাওয়া যাচ্ছে।)

বর্তমানে বিশেষ আকর্ষণ নলেন গুড়ের চা।

নলেন গুড় তার সঙ্গে সম্পর্কিত কর্ম সংস্থান 

সরকারি বিভিন্ন বেসরকারি উদ্যোগে হাজারো ভেজাল থেকে আলাদা করে খাঁটি স্বাস্থ্য সম্মত খেজুর গুড় উৎপাদন করার জন্য শিউলি গাছি দের প্রশিক্ষণ এর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। স্কিল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম এর আওতাই ৪০০ থেকে ৫০০ জন ক্ষুদ্র চাষী খেজুর মালিকদের নিয়ে সমবায় পদ্ধতিতে গুড় তৈরি বিপননের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। 

নালেন গুড়ের ইতিহাস সাহিত্য সিনেমা 

ইতিহাসবিদ নিহার রঞ্জন রায়ের 'বাঙালির ইতিহাস আদিপর্ব ' থেকে জানা যায় ৮০০ বছর আগে 'সদুক্তিকণামৃত' তে নলেন গুড়ের ভুয়সী প্রশংসা রয়েছে। সত্তর দশকের অমিতাভ বচ্চন, নুতন, পদ্মা খান্না অভিনীত 'সৌদাগর' ছবি এখনো সকলের কাছে সমান ভাবে সমাদৃত, যা শিউলি দের জীবন জীবিকা নিয়ে চিত্রায়িত।

উপসংহার 

তাই পরিশেষে ভেজাল বা সস্তার গুড় থেকে বিরত থাকুন, ন্যায্য দামে খাঁটি খেজুর গুড়ের সন্ধানে থাকুন। আর খাঁটি গুড় চিনবেন কিভাবে? গুড় খাঁটি হলে হালকা চাপ দিলেই ভেঙে যাওয়ার কথা। আলতো করে আঙুলের চাপ দিলেই যদি গুড় ভেঙে যায়, তাহলে বুঝবেন সেই পাটালি গুড় খাঁটি। খেজুর গুড়ের গন্ধ আপনার মন জুড়িয়ে দেবে এটা যেমন সত্যি, তেমনই সত্যি হলো গন্ধ শুঁকেই মজে গেলে হবে না। কারণ আসল গন্ধ না বুঝে কিনে ফেললে ঠকে যাওয়ার ভয় থাকতে পারে। অনেক সময় গুড়ের কৃত্রিম সুবাস আনার জন্য রাসায়নিক মেশানো হয়। তাই গন্ধ শুঁকেই সেই গুড় খাঁটি বলে ধরে নেবেন না।

 

আর শীত মানেই বাঙালির পুলি পিঠে, পাটিসাপ্টা, মালপোয়া, পায়েস আর মনের মধ্যে গান ধরা।

খেজুর গাছে হাঁড়ি বাঁধো মন

খেজুর গাছে হাঁড়ি বাঁধো মন,

নইলে রস গড়িয়ে,

নইলে রস গড়িয়ে গোড়া পচে 

অকালে হবে মরণ

খেজুর গাছে হাঁড়ি বাঁধো মন

খেজুর গাছে হাঁড়ি বাঁধো মন।