Dhurandhar 2025 Review in Bengali: রণবীর সিংয়ের নকআউট অ্যাকশন ও মুভির বিশ্লেষণ

ধুরন্ধর আদিত্য ধরের পরিচালনায় নির্মিত একটি দীর্ঘ, রাজনৈতিকভাবে টানটান স্পাই-অ্যাকশন থ্রিলার, যেখানে রণবীর সিংয়ের পারফরম্যান্স এবং অ্যাকশন সেট-পিসই মূল আকর্ষণ। পারফরম্যান্স ও অ্যাকশন দারুণ, কিন্তু অতিরিক্ত লম্বা রানটাইম ও সেকেন্ড হাফের স্লো পেস বড় দুর্বলতা।

বাংলার মেলা ও উৎসব ২০২৬

 ধুরন্ধর: সংক্ষিপ্ত পরিচিতি:


ধুরন্ধর”, আদিত্য ধর পরিচালিত একটি রাজনৈতিক অ্যাকশন থ্রিলার আজ প্রেক্ষাগৃহ গুলিতে মুক্তি পেয়েছে , যেখানে রণবীর সিং, অক্ষয় খন্না, অর্জুন রামপাল, সঞ্জয় দত্ত সারা অর্জুনের দারুণ অভিনয় দেখা গেছে  

ছবির মূল কেন্দ্রবিন্দু হল দেশের নিরাপত্তা গোপন মিশনের মধ্যে ঘটিত রাজনৈতিক-বল গত মিশ্রণ।

প্রেক্ষাপট মিশনের সূচনা:

এই সিনেমার মুল প্রেক্ষাপট পাকিস্তানের লিয়ারি অঞ্চলে গোপন মিশনে পাঠানো এক ভারতীয় স্পাইকে ঘিরে, যে সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কের ভেতরে ঢুকে ধীরে ধীরে প্রতিটি লিঙ্ক ভেঙে দেয়। 

১৯৯৯-এর কান্দাহার হাইজ্যাক থেকে 26/11 মুম্বাই হামলার মতো জাতীয় সংকটগুলোর পটভূমি ব্যবহার করে সিনেমা বাস্তব ঘটনার অনুপ্রাণিত, গ্রিটি ক্রসবর্ডার স্পাই থ্রিলারকে গ্যাংস্টার আন্ডারওয়ার্ল্ড সাগার সাথে মিশিয়েছে।

২০০০-এর দশকে দেশ জুড়ে সন্ত্রাস জাতীয় নিরাপত্তার সংকট তৈরি হয় এই পরিস্থিতিতে গোয়েন্দা বিভাগ রাজনৈতিক স্তর থেকে গোপন অপারেশনের পরিকল্পনা করা হয়। লক্ষ্য হল শত্রু অঞ্চলে প্রবেশ করে মূল ষড়যন্ত্রকারীদের ধ্বংস করা।

হামজার নিয়োগ পরিচয়

হামজা (রণবীর সিং) হলেন একজন সাহসী কিন্তু গোপন এজেন্ট, যিনি দেশের সবচেয়ে বিপজ্জনক মিশনের দায়িত্বে নিযুক্ত হন। তাঁর আসল পরিচয় খুব কম মানুষই জানে—বাইরে থেকে তিনি একজন সাধারণ ব্যবসায়ী বা পর্যটক বলেই মনে হয়। কিন্তু এই ছদ্মবেশের আড়ালে তিনি একজন প্রশিক্ষিত গুপ্তচর, যাঁর কাজ হচ্ছে দেশের জন্য অমূল্য তথ্য সংগ্রহ করা এবং বিপদের মোকাবিলা করা।মিশন শুরু হয় যখন গোয়েন্দা সংস্থা একটি আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কের সন্ধান পায়, যারা ভারতের নিরাপত্তার প্রতি গুরুতর হুমকি সৃষ্টি করছে।

হামজাকে পাঠানো হয় সীমান্তের ওপারে, যেখানে প্রতিটি পদক্ষেপই হতে পারে প্রাণঘাতী। তিনি স্থানীয়দের সঙ্গে মিশে যান, শত্রুপক্ষের আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন এবং ধীরে ধীরে সংগঠনের অন্তরে প্রবেশ করেন।তবে যতই তিনি গভীরে প্রবেশ করেন, সত্য ততই জটিল হয়ে ওঠে। নেটওয়ার্কের শিকড় শুধু সীমান্তের ওপারে নয়, দেশের ভেতরেও বিস্তার লাভ করেছে। 

হামজাকে বুঝতে হয়—এই মিশন শুধু শত্রুর বিরুদ্ধে নয়, নিজের ভেতরের ভয়, বিশ্বাসঘাতকতা ও নৈতিক দ্বন্দ্বের বিরুদ্ধেও এক লড়াই।শেষ পর্যন্ত তাঁকে দেশের মাটির প্রতি তাঁর আনুগত্য প্রমাণ করতে হয় এক কঠিন সিদ্ধান্তের মাধ্যমে—যেখানে ব্যক্তিগত জীবনের সব সম্পর্ক, বিশ্বাস, এমনকি নিজের নিরাপত্তাকেও ত্যাগ করতে হয় দেশের ভবিষ্যতের জন্য।

অনুপ্রবেশ সন্ধান

হামজা শত্রু অঞ্চলে কৌশলে প্রবেশ করেন এবং স্থানীয় গ্যাংস্টারদের মধ্যে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। ধীরে ধীরে সন্ত্রাসী সংযোগগুলোর সীমারেখা বিচ্ছিন্ন করেন, ছোট থেকে বড় সংযোগ পর্যন্ত অনুসন্ধান চালান।

রেহমান আঘাতের উত্থান

গ্যাংস্টার রেহমান (অক্ষয় খন্না) ছবির অন্যতম শক্তিশালী চরিত্র। ব্যক্তিগত ট্রমা থেকে তিনি প্রতিশোধবোধে পরিচালিত হন এবং নিজেকে এক ভয়ঙ্কর অস্ত্র হিসেবে গড়ে তোলেন।

মেজর ইকবালের আবির্ভাব

হামজার অনুসন্ধানের কেন্দ্রবিন্দুতে আসেন আইএসআই-এর মেজর ইকবাল (অর্জুন রামপাল), যিনিঅ্যাঞ্জেল অফ ডেথনামে পরিচিত। তার উপস্থিতি মিশনকে অপ্রত্যাশিত জটিলতায় ঠেলে দেয়।

গ্যাং-ওয়ার, রাজনৈতিক চাপ সংঘাত

হামজার কার্যকলাপ প্রকাশ পেতেই গ্যাং-ওয়ার ছড়ায়। রাজনৈতিক স্বার্থ ষড়যন্ত্রের ছায়া মাথা তুলে ধরে। প্রাক্তন পুলিশ কর্মকর্তা আসলাম খান (সঞ্জয় দত্ত) আইন-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব নেন।

ঝুঁকি, ধাঁধা পরিচয়ের ঝুঁকি

হামজা ক্রমশ শত্রুদের নজরে আসেন; পরিচয় ধরা পড়ার ভয় বাড়ে। মনস্তাত্ত্বিক চাপ, বিশ্বাসঘাতকতার ছায়া জীবন-হারানোর আশঙ্কা তাকে প্রতিমুহূর্তে পরীক্ষা করে।

চরম মুখোমুখি ক্লাইম্যাক্স

হামজা মেজর ইকবালের সরাসরি সংঘর্ষ দেখা যায়। ছবির দ্বিতীয়ার্ধে গতি কিছুটা ধীর হয়, যুদ্ধ আবেগের উত্তেজনা ধাপে ধাপে মাথা তুলে ধরা হয়।


পরিণতি ফলাফল

মিশন সমাপ্তি ষড়যন্ত্রের পরিণতি দেখানো হয়। কিছু চরিত্রের জীবনে স্থায়ী প্রভাব পড়ে। শেষে প্রশ্ন থেকে যায়মিশন কি সম্পূর্ণ সফল হয়েছে? দর্শকদের মনে কৌতূহল রেখে যায়।


পারফরম্যা সারাংশ

  • রণবীর সিং ছবির কেন্দ্রে থেকে কাঁচা শক্তি ও আবেগের বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন। তাঁর অভিনয়ে দেখা যায় উন্মাদনার সঙ্গে নিয়ন্ত্রিত তীব্রতার অসাধারণ ভারসাম্য। প্রতিটি দৃশ্যে তিনি চরিত্রের মানসিক টানাপোড়েনকে এমনভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন, যা দর্শককে গল্পের ভেতরে টেনে নিয়ে যায়। রণবীরের শরীরী ভাষা, চোখের চাহনি ও সংলাপের টান সবকিছু মিলে তাঁকে করে তুলেছে ছবির প্রাণ।

  • অক্ষয় খন্না এখানে একদম ভিন্ন ছন্দে খেলেছেন। তাঁর চরিত্রের ভেতরে যেমন দুর্বলতা ও মানসিক ভাঙন রয়েছে, তেমনি আছে এক গভীর উপস্থিতি। অক্ষয় নিজের মিতভাষী ও স্থির অভিব্যক্তির মাধ্যমে চরিত্রের গভীর যন্ত্রণাকে নিখুঁতভাবে প্রকাশ করেছেন। দর্শক তাঁর প্রতিটি নীরব মুহূর্তেও অনুভব করতে পারে এক প্রবল অস্থিরতা।

  • অর্জুন রামপাল ছবিতে আছেন এক ভয়াবহ কিন্তু ক্ষমতাধর চরিত্রে। তাঁর রূঢ় কণ্ঠস্বর, আত্মবিশ্বাসী ভঙ্গি ও পরিমিত সংলাপ ব্যবহারে চরিত্রটি আরও বাস্তব ও আশঙ্কাজনক হয়ে ওঠে। তিনি গল্পের উত্তেজনা ধরে রাখেন, এমনকি রণবীরের মতো এনার্জেটিক চরিত্রের বিপরীতে দাঁড়িয়েও নিজের জায়গা শক্ত করে রাখেন।

  • সঞ্জয় দত্ত তাঁর স্বাক্ষরশৈলীতেই গল্পে আনেন এক অন্য মাত্রা। তীব্র কাহিনির মাঝেও তাঁর উপস্থিতি দর্শককে দেয় কিছুটা হাস্যরস, হালকা ভাব, এবং পুরোনো সঞ্জয় দত্ত-স্টাইলের ডায়ালগ ডেলিভারি। তাঁর অভিজ্ঞতা ও স্বাচ্ছন্দ্য গল্পের ভারসাম্য রক্ষা করে।

  • সারা ছবিতে অর্জুনের ভূমিকা ছোট ও সংযত হলেও, তাঁর অভিনয়ে সংবেদনশীলতার ছোঁয়া রয়েছে। তবে চরিত্র নির্বাচনের ক্ষেত্রে কিছু দর্শকের মধ্যে প্রশ্ন রয়ে যায়—এ ধরনের চরিত্রে তাঁকে নেওয়া প্রয়োজন ছিল কি না, নাকি অন্য কেউ আরও প্রভাব ফেলতে পারতেন। তবুও সারা নিজের সীমিত পরিসরেও যথেষ্ট সংবেদন আনতে পেরেছেন।

কি কাজ করে / কি কাজ করে না

কাজ করে

কাজ করে না

উচ্চ-ভোল্টেজ অ্যাকশন

দীর্ঘ রানটাইম (প্রায় 214 মিনিট)

শক্তিশালী কেন্দ্রীয় পারফরম্যান্স

দ্বিতীয়ার্ধের ধীরগতি

অ্যাড্রেনালাইন বাড়ানো ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর

কিছু দৃশ্য ছেঁটে দিলে ভালো হত

সারা অর্জুনের কাস্টিং কিছু দর্শকের মনে খটকা


ধুরন্ধর মূলত রণবীর সিংয়ের শক্তিশালী পরদর্শন। রানটাইম গল্পের গতি সবসময় সমান মাত্রায় কাজ না করলেও, অ্যাকশন সিকোয়েন্স, পারফরম্যান্স পটভূমি সঙ্গীত দর্শকদের জন্য ভ্রমণকে মূল্যবান করে তোলে। যারা উচ্চ-স্তরের অ্যাকশন বড়ো হতাশা-মিশ্র নাটক দেখতে চান, তাদের জন্য এটি দেখার মতো। তবে টাইট, কম দৈর্ঘ্যের থ্রিলার পছন্দ করলে ধৈর্য পরীক্ষা হতে পারে।