Ghost: বাংলার ভৌতিক চরিত্র, একা রাতে এই তথ্য পড়ার সময় আপনিও একবার পিছন ফিরে তাকাবেন!

কিছুদিন আগেই স্ত্রী-২ সিনেমা রিলিজ হয়েছিল, স্ত্রী-২ ভুতের চরিত্র সারকাটা অর্থাৎ মাথা কাটা, এই সারকাটা বা ভুলভুলাইয়ার মঞ্জুলিকার মত বাংলায় অসংখ্য ভৌতিক চরিত্র অর্থাৎ অশরীরী চরিত্র বর্তমান।



বাংলার লোকসাহিত্য সম্পর্কে আলোচনা করবার সময় প্রথমেই যা নজরে আসে তাহল বাংলার ভৌতিক লোককথা। এই ভৌতিক লোককথার গুরুত্বপূর্ণ অংশটি হলো ভুতুড়ে চরিত্র। বাংলার অসংখ্য লেখক এই ভৌতিক চরিত্র গুলোর উপর গল্প উপন্যাস লিখে গেছেন। 

আরও পড়ুন : ২০২৪ এ সর্বাধিক আয় করেছিল ভারতের যে সিনেমা 

ভূত হল এক ধরনের অতৃপ্ত আত্মা। প্রাচীন লোককথা থেকে জানা যায়, মৃত্যুর পর যে সমস্ত মানুষের আত্মা শান্তি খুঁজে পাইনি পৃথিবীতেই ঘুরে বেড়িয়েছে তারাই হল ভূত। শুধু তাই নয় লোকসাহিত্য এটাও বলা হয়েছে, জীবজন্তুর আত্মাও মৃত্যুর পরে মুক্তি না পেলে অশরিরীয় শক্তিতে পরিণত হয়। বাংলার ভৌতিক লোককথায় ভুত, দৈত্য- দানব এই চরিত্রগুলি খুবই স্পষ্ট ভাবে ফুটে উঠেছে। শুধুমাত্র প্রাচীনকালে নয় বর্তমান সময়কালের রূপকথার গল্পেও এই চরিত্রগুলির বিবরণ পাওয়া যায়।


ভারতীয় লোকসাহিত্যে অনেক প্রকার ভুতূরে চরিত্রের প্রকাশ পাওয়া যায়। সেই সম্পর্কে নিম্নে কিছু ধারণা প্রদান করা হলো-


ডাইনি: 

লোকসাহিত্য থেকে জানা যায়, ডাইনি কোন আত্মা নয় এরা মৃত বা জীবিত দুধরনের হতে পারে। এরা  সাধারণত  জীবিত বৃদ্ধা নারী যারা ডাইনিবিদ্যায় পারদর্শী। এরা নিজেদের বৃদ্ধা রুপ লুকিয়ে যুবতী রূপ ধারণ করে থাকে এবং গ্রামগঞ্জের ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের স্বীকার করে। এই শিশুদের তুলে এনে হত্যা করে এরা তাদের রক্ত মাংস খেয়ে দীর্ঘ ১০০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে।


ব্রহ্মদৈত্য: 

প্রাচীনকালের অতি পরিচিত এক ধরনের ভূতুড়ে চরিত্র হলো ব্রহ্মদৈত্য। লোককথায় জানা যায়, ব্রহ্মদৈত্য হল অভিশাপগ্রস্ত ব্রাহ্মণের অতৃপ্ত আত্মা। সাধারণত এরা ধুতি ও পৈতা পরিধান করে থাকে এবং সমাজে এদেরকে পবিত্র ভূত হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে। এরা অত্যন্ত দয়ালু প্রকৃতির হয়। বহু দুঃখী মানুষকে সাহায্য করে থাকে এবং বিপদের হাত থেকেও রক্ষা করে।


দেও: 

এমন এক ধরনের ভূত যারা নদীতে বা

জলাশয় বসবাস করে। লোকমুখে শোনা যায়, এরা লোকজনকে জলে ডুবিয়ে মারে।


পেত্নি: 

প্রাচীন  ভৌতিক লোককথার একটি জনপ্রিয় চরিত্র হল পেত্নি । এরা হল নারীদের অতৃপ্ত আত্মা । লোককথা অনুসারে যেসমস্ত নারীরা বেঁচে থাকার সময় নিজেদের আশা-আকাঙ্ক্ষা কোনটাই পূরণ করতে পারিনি। বিয়ের আগেই কোনো দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে এবং তারা নিজেদের জীবনে কোনো খারাপ কাজ করবার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিল। সে সমস্ত নারীদের আত্মা মৃত্যুর পরেও মুক্তি না পৃথিবীতেই ঘুরে বেড়ায়, এরাই পেত্নী নামে পরিচিত।


পেত্নীরা খুব বদমেজাজী হয়। এরা নিজের রূপ ও আকার বদলাতে পারে, এমনকি পুরুষের রূপ ধারণ করতে পারে। এরা সেইসব মানুষদের পছন্দ করে না যারা সুখে শান্তিতে বেঁচে আছে।


গেছো ভূত: 

গেছো  শব্দটি এসেছে গাছ থেকে। এমন কিছু ভূত রয়েছে যারা গাছে বাস করে তাদের বলা হয় গেছো ভূত।


বুকে চোখ: 

এই ধরনের প্রেতাত্মার কোন মাথা থাকে না। এদের বুকে একটিমাত্র চোখ থাকে এবং এরা মানুষের স্বপ্নে এসে ভয় দেখায়। এমনকি এই ভূতেরা রাতের একাকী মুহূর্তে মানুষকে আক্রমণ করে থাকে।


পিশাচ: 

পিশাচ এক ধরনের দানব। এরা কোন আত্মা নয় দেহধারী শয়তান। এরা মানুষের মৃতদেহ ভক্ষণ করে। প্রাচীন লোককথা অনুসারে  এরা প্রায় এক হাজার, এক রাত্রি বেঁচে থাকে।


বোবা: 

রাতের বেলায় ঘুমের মধ্যে মানুষের উপর ভর করে এমন প্রেতাত্মার নাম বোবা। সাধারণত চিৎ হয়ে শুলে নাকি বোবা সহজে মানুষকে আক্রমণ করতে পারে। এই সময় মানুষের শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। মানুষের বিকৃত স্বরে গোঙাতে থাকে এবং সহজে তাকে জাগিয়ে তোলা যায় না। এই সময় মানুষের  শরীরও  অসাড় হয়ে পড়ে।


মামদো ভুত: 

হিন্দু বিশ্বাস অনুসারে, মামদো হলো মৃত মুসলমানদের আত্মা। মামদো ভূতের  শ্রেণীভূক্ত পেতাত্মা। এটি পুরুষ ভূত, এই ভূত বাতাসে মিশে থাকে এবং লোকালয়ের আশেপাশে কোন গাছ গাছরা আশ্রয় নেয়। এরা মানুষকে বিপদে ফেলতে এবং অনিষ্ট করতে অনেক আনন্দ পেয়ে থাকে।


টাকরা-টাকরি: 

লোককথায় টাকরা- টাকরি নামক এক অশরিরীয় প্রেতাত্মার উল্লেখ পাওয়া যায়। এরা ছোট ছোট শিশুদের ধরে খেয়ে ফেলে বলে  দীর্ঘদিন ধরে  প্রচলিত রয়েছে।


জিন: 

জিন জাতিতে হলো মুসলিম। এরা এক অশরীরী  ও শয়তান। এদের কোন রোগ নেই এরা অন্ধকারে  সবার অন্তরালে বাস করে। আরবি জিন শব্দের আক্ষরিক অর্থ হলো অদৃশ্য বা গুপ্ত। এরা বিভিন্ন প্রজাতির হয়ে থাকে যেমন জিন-শয়তান, এরা শয়তানের বংশধর যারা ভগবানের আদেশ অমান্য করে খারাপ পথ বেছে নেয় এবং মানুষের ক্ষতি করার জন্য বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে। এরা বিভিন্ন রূপও ধারণ করতে পারে।      


দ্বিতীয় হল ক্কারিন, এরা মানুষের মনে পাপের সঞ্চার ঘটায়। এরপর রয়েছে খাসিব, এরা নোংরা স্থানে থাকে এবং মানুষের ক্ষতি করার চেষ্টা করে। 


লোককথা অনুসারে, কিছু ভালো জিনও রয়েছে। যারা মানুষের সাহায্য করে থাকে কিন্তু খারাপ জিন অনেক বেশি ক্ষতি করা হয়। এরা খুব শক্তিশালী হয়ে থাকে এবং সহজেই মানুষকে বশ করে নিতে পারে। এদের কোন রুপ বা আকার থাকেনা, কিছু অদ্ভুত শব্দের মাধ্যমে এরা  মানুষের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে।


ভূতুড়ে আলো: 

রাতের অন্ধকারে খোলা স্থানে ও জলাভূমির কাছাকাছি কোন স্থানে এই ধরনের আলো দেখতে পাওয়া যায়। মাটি থেকে একটু উপরে এই আলোগুলো ভাসমান অবস্থায় থাকে। এই আলোগুলি  নিজেদের আকার রং বদলাতে পারে। এরা কখনো ধীরে আবার কখনো খুব দ্রুত গতিতে যাত্রা করে। যে মানুষেরা এই আলোগুলির পিছু নেয়  তারা আর কখনো ফিরে আসে না।


সুন্দরবন ও রাজস্থানে এই আলো প্রায়ই লক্ষ্য করা যায়, এই আলোর জন্যে বহু জেলেরা তাদের প্রাণ হারিয়েছে।


জুজু: 

এটি  হল স্ত্রীভূত। জুজু আসলে বৃদ্ধা  পিশাচ। লৌকিক কাহিনী অনুসারে, এরা ছোট ছোট বাচ্চাদের ধরে নিয়ে যায়।


বেতাল: 

হিন্দু লোককাহিনী মতে, বেতাল একটি অতি প্রাকৃতিক শক্তি সম্পন্ন প্রাণী। এটি  আত্মা বিশেষ  যার কোন মৃত্যু নেই, সে যে কারোর শরীরে ভর করতে পারে। 


বেতাল শ্মশান ঘাটে ঘুরে বেড়ায় এবং মৃত মানুষের শরীরে নিজেদের বাসা তৈরি করে। এরা সাধারণত গাছে উল্টো ঝুলে থাকে। রাজা বিক্রমাদিত্যের গল্পেও বেতাল চরিত্রের উল্লেখ পাওয়া যায়।


কানাভুলো: 

এই শ্রেণীর ভূতেরা পথিকের গন্তব্য ভুলিয়ে দেয় এবং কোন নির্জন, অচেনা এলাকায় তাদের নিয়ে আসে। এদের জন্য কখনো কখনো মানুষের একই পথ দিয়ে বারবার যাত্রা করে ও ঘুরপাঁক খেতে থাকে। এরা তাদের শিকারকে পছন্দমত স্থানে নিয়ে গিয়ে আক্রমণ করে। এই ভুতেরা নির্জন এলাকায় মানুষকে আক্রমন করে। এই ধরনের ভূতেদের  রাতে গ্রামের মাঠের ধারে এবং পথের মাঝে দেখতে পাওয়া যায়। 


ঝেয়ো পেত্নী: 

এই পেত্নীরা নিজেদের ঝাউগাছ লুকিয়ে রাখে। এরা পথযাত্রীদের নানাভাবে অত্যাচারিত করে।


ভরসন্ধ্যাবেলায় কোন পথিক একা একা ঝাউবন বেরোবার সময় তাদের এই পেত্নীরা গাছের সবচাইতে   উচু ডালে চড়িয়ে দেয়। 


ডাকিনী: 

ডাইনী বুড়িদের একশ্রেণীর মধ্যে হলে ডাকিনী। এরা পুকুর ধারে কোন নারকেল বা তাল গাছে বাস করে। ডাকিনী পাতিহাঁস খেতে খুব পছন্দ করে। এদের অন্যতম একটি অভ্যাস হলো, এরা দিনে দুপুরে মেয়েদের রুপ নিয়ে ঘুরে বেড়ায়।


মেছোভুত: 

মেছো শব্দটি বাংলা মাছ শব্দ থেকে এসেছে। মেছো ভূতেরা মাছ খেতে খুব পছন্দ করে, এরা সাধারণত গ্রামের কোন পুকুর পাড়ে যেখানে বেশি পাওয়া যায় সেসব স্থানে বাস করে।


মেছোভুত নির্জন স্থানে মাছ বহনকারী ব্যক্তিদের আক্রমণ করে, মাছ ছিনিয়ে নেয় আবার কখনো কখনো তাদের পিছু নিয়ে ফেলে। এরা জেলেদের নৌকা থেকে মাছ চুরি করে খেয়ে নেয়।


চোরাচুন্নি: 

প্রাচীন কাহিনী অনুসারে, চোরাচুন্নি হলো এমন কোনো অতৃপ্ত  আত্মা যারা  জীবিত অবস্থায় চুরির কাজে নিযুক্ত ছিল। মৃত্যুর পর কোন চোরেরা মুক্তি না পেলে তারাই চোরাচুন্নি তে পরিণত হয়।

                           

চোরাচুন্নি অত্যন্ত দুষ্টু প্রকৃতির হয় এরা মানুষের অনিষ্ট করতে থাকে। কথিত আছে, পূর্ণিমা রাতে এরা মানুষের বাড়িতে ঢুকে ক্ষতি সাধন করে। এদের হাত থেকে বাঁচতে গঙ্গাজল এর ব্যবস্থা করা হয় বাড়িতে।


কিচনি: 

কিচনি হলো জলের এক অলৌকিক জীব। এরা বদ্ধ পুকুর এবং জলাশয় বসবাস করে। যে স্থানের জল বেশি গভীর হয় সেখানে কিচনি থাকার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। লোককথায় জানা যায়, কিচনির অনেক লম্বা কালো ঘন চুল থাকে।


বেঘোভূত: 

লোককাহিনী অনুসারে বিশ্বাস করা হয়ে থাকে, যেসব মানুষের মৃত্যু বাঘের আক্রমণের কারণে হয়েছে তাদের অতৃপ্ত আত্মারাই রুপ নেয় বেঘোভূতের।


বেঘোভূতেরা বনে আগত মধু সংগ্রহকারীদের পথ ভুলিয়ে বাঘের কাছাকাছি নিয়ে যায় এবং তাদের ভয় দেখানোর জন্য কখনো কখনো বাঘের স্বরে ডেকে ওঠে। সাধারণত সুন্দরবন এলাকায় এ ধরনের ভূতের উপদ্রব বেশি প্রচলিত।


নিশি: 

ভূতেদের মধ্যে অন্যতম হলো নিশি এরা নির্জন এলাকায় মানুষ কে একা পেয়ে আক্রমণ করে। নিশি গভীর রাতে ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে তার শিকারকে তাদের প্রিয়জনের কন্ঠে ডাক দেয় এবং ঘর থেকে বাইরে বের করে আনার চেষ্টা করে। যে মানুষেরা নিশির ডাকে সাড়া দিয়ে ঘরের বাইরে বেরিয়ে আসে তাদের আর কোনদিনও দেখতে পাওয়া যায় না। অনেকে মনে করে, কিছু তান্ত্রিক প্রতিশোধের জন্য নিশিকে ব্যবহার করে থাকে। তবে লোককথা থেকে জানা যায়, নিশি কখনোই কোন মানুষকে দুবারের বেশী ডাকতে পারেনা।


স্কন্ধকাটা: 

এরা হলো এক অলৌকিক জীব। এরা মাথাবিহীন হয়ে থাকে এবং এলাকা বিশেষে এরা বিভিন্ন নামে পরিচিত। এরা হলো সেইসব মানুষের আত্মা যাদের মৃত্যু কোনো দুর্ঘটনায় মাথা কাটা পড়ার কারণে হয়েছে। এই শ্রেণীর ভূতেরা সবসময় তাদের হারানো মাথা খুঁজে বেড়ায় এবং অন্যান্য মানুষকে আক্রমণ করে নিজের দাসে পরিণত করে। শুধু তাই নয় তাদেরকেও তার মাথা খোঁজার কাজে লাগায়। এরা পথের পাশে কোন গর্তে ঝোপেঝাড়ে বাস করে।

রায়গঞ্জের তুলাইপাঞ্জি চাল অতুলনীয় স্বাদ ও সুগন্ধির জন্য বিশ্ব বাজারে সমাদৃত, কি এর গুণাবলী? কত চাষ হয়?

"তুলাইপাঞ্জি" নামটি দুটি বাংলা শব্দ থেকে এসেছে: “তুলাই” যার অর্থ কোমল বা হালকা এবং “পাঞ্জি” যার অর্থ চাল। এই জাতটির একটি দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে এবং এটি শতাব্দী ধরে পশ্চিমবঙ্গে চাষ করা হয়ে আসছে, যার বৈশিষ্ট্যগুলি স্থানীয় রন্ধনপ্রথায় অঙ্গীভূত হয়েছে।


Pic: Amazon

তুলাইপাঞ্জিকে 'অ-বাসমতি সুগন্ধি চাল' হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে। এটির গড় দৈর্ঘ্য 5.5 মিমি, দৈর্ঘ্য/প্রস্থ অনুপাত 3.4 এবং প্রসারণ অনুপাত 1.6 সহ মাঝারি-লম্বা সরু দানা রয়েছে। 


এই জিআই ট্যাগ করা প্রাচীন লোক চাল 2012 লন্ডন অলিম্পিকে আমাদের অপরাজেয় রন্ধন সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্ব করেছিল! তুলার (তুলন) মতো সুগন্ধি এবং নরম, এটাই তুলাইপাঞ্জির অর্থ এবং স্বাদ। এর সুগন্ধি এই অ-বাসমতী ভাতকে পুলাও, ভাজা ভাত, বিরিয়ানি এবং পিঠে, পায়েশের মতো মিষ্টান্ন এবং স্থানীয় সুস্বাদু খাবারের জন্য একটি দুর্দান্ত পছন্দ করে তোলে। আমরা প্রায়শই এটি আমাদের রোজের চাল (আমাদের প্রতিদিনের চাল) হিসাবেও ব্যবহার করি।


রান্না করা ভাত খুব সুস্বাদু, গঠনে ভালো, চেহারায় উজ্জ্বল, উচ্চ অ্যামাইলোসকন্টেন্টের কারণে আঠালো নয় এবং ভঙ্গুর। তুলাইপাঞ্জিতে রয়েছে অ্যামাইলোজ- ২৮.৩%, প্রোটিন-৭.৩%। 


সম্প্রতি, তুলাইপাঞ্জি চাল তার বিশেষ সুগন্ধ এবং স্বাদের পাশাপাশি পুষ্টিগত উপকারিতার জন্যও বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। এটি বিশেষত বাংলা রন্ধনশৈলীতে ব্যবহৃত হয়, যেমন পিঠে (চাল কেক) এবং পায়েস (মিষ্টি চালের পুডিং)।


এই চালটি তার মৃদু, বাদামী স্বাদ এবং সুগন্ধের জন্য পরিচিত, যা যে কোনও রান্নায় যোগ করলে তা উন্নত হয়ে ওঠে।


তুলাইপাঞ্জি চালের উপকারিতা:

তুলাইপাঞ্জি চালের বেশ কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে, যা স্বাস্থ্য-conscious মানুষদের জন্য এটি একটি ভালো পছন্দ করে তোলে। এটি থায়ামিন, নাইসিন, ভিটামিন B6, আয়রন এবং ম্যাগনেসিয়ামের মতো অপরিহার্য পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ। 


চালটিতে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি শরীরের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে সহায়ক, যার ফলে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং কিছু ক্যান্সারের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমে যেতে পারে। এছাড়াও, এর উচ্চ ফাইবার কন্টেন্ট পাচন প্রক্রিয়াকে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সহায়ক।


তুলাইপাঞ্জি চালের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা হল এর নিম্ন গ্লাইসেমিক সূচক। যেসব খাবারের গ্লাইসেমিক সূচক কম, তা ধীরে ধীরে হজম হয় এবং রক্তে শর্করা বাড়ানোর হার ধীর হয়। এর ফলে, এটি ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে এবং খাওয়ার পর দীর্ঘ সময়ের জন্য তৃপ্তি অনুভূতি বজায় রাখে। আরও কী, তুলাইপাঞ্জি চাল প্রাকৃতিকভাবে গ্লুটেন-মুক্ত, যা সেলিয়াক রোগ বা গ্লুটেন সহনশীলতা সমস্যাযুক্ত মানুষের জন্য উপযোগী।


কিছু গবেষণায় এও প্রমাণিত হয়েছে যে, তুলাইপাঞ্জি চালের উপাদানগুলি কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করতে পারে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি আরও কমিয়ে দিতে পারে। তবে, মনে রাখা উচিত যে তুলাইপাঞ্জি চালের স্বাস্থ্য উপকারিতাগুলি সম্পর্কে আরও গবেষণা প্রয়োজন। যে কোনো খাবারের মতো, এটি সুষম ডায়েটের অংশ হিসেবে পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত।


উৎপাদনের সময় সীমা :

ঐতিহ্যগতভাবে, তুলাইপাঞ্জি অগাস্ট-ডিসেম্বর সময়কালে বর্ষা মৌসুমের পরে মধ্য-জমি থেকে উঁচু জমিতে এবং বিশেষ করে পাট কাটা ক্ষেতে কোনো সার ব্যবহার না করেই চাষ করা হয়। কম মাটির উর্বরতা এবং আর্দ্রতার চাপ সাধারণত ক্রমবর্ধমান ক্ষেত্রে বিরাজ করে এবং সুগন্ধের পিছনে মূল কারণ বলে বিশ্বাস করা হয়। 


অজৈব সার সাধারণত এই চাল এর সুগন্ধ এবং অন্যান্য গুণগত মান কমিয়ে তোলে আর এই কারণে অজৈব সার তুলাইপাঞ্জি উৎপাদনে ব্যবহার করা হয় না।


সাল অনুসারে ফলন :

বর্তমানের তথ্য অনুযায়ী খাদ্যরসিকদের জন্য সুখবর। উত্তর দিনাজপুরে জেলার একমাত্র নিজস্ব দেশি ধান তুলাইপাঞ্জি উৎপাদনে রেকর্ড উৎপাদন গড়লেন কৃষকরা। ২০২৪ সালের খারিফ মরশুমে সর্বাধিক বেশি তুলাইপাঞ্জির ফলন হয়েছে উত্তর দিনাজপুরে। 


শুধুমাত্র রায়গঞ্জ রায়গঞ্জ মহকুমার নির্দিষ্ট কৃষিজমিতে সুস্বাদু, সুগন্ধে অতুলনীয় তুলাইপাঞ্জি ধান চাষের সুযোগ সীমাবদ্ধ। জেলাজুড়ে প্রায় ২ লক্ষ ৬ হাজার হেক্টর কৃষিজমিতে উচ্চ ফলনশীল আমন ধান চাষ হয়েছিল। তার মধ্যে ১২ হাজার হেক্টর জমিতে তুলাইপাঞ্জি ধান চাষ করেছিলেন ২২ হাজার ৩০০ কৃষক।  


২০২১ সালের থেকে অন্তত ৬ হাজার মেট্রিন টন বেশি তুলাইপাঞ্জি ধান উৎপাদন হয়েছে। জেলা কৃষি দপ্তর সূত্রে জানানো হয়, 


২০১৬- ১৭ অর্থবর্ষে মাত্র ৬ হাজার হেক্টর জমিতে তুলাইপাঞ্জি ধান চাষ হত। 


২০১৮-১৯ সালে তার পরিমাণ বেড়ে সাড়ে ৭ হাজার হেক্টর জমিতে তুলাইপাঞ্জির চাষ হয়। 


২০২০-২১ সালে ওই চাষের জমির পরিমাণ বেড়ে ১ হাজার হেক্টর জমিতে তুলাইপাঞ্জি আবাদ হয়েছিল। 


২০২১-২২ অর্থবর্ষে সাড়ে ৯ হাজার হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়। 


২০২১-এ ১৮ হাজার মেট্রিন টন তুলাইপাঞ্জি ফলন হয়েছিল। গত বছরের উৎপাদনকে পিছনে ফেলে ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে ১২ হাজার হেক্টর জমিতে প্রায় ২৪ হাজার মেট্রিন টন, 


২০২৩- '২৪ সালে ৩০ হাজার মেট্রিক টন তুলাইপাঞ্জির ফলন হয়েছে। 


সম্প্রতি অর্থাৎ ২০২৫ সালে ৩৬ হাজার মেট্রিক টন তুলাইপাঞ্জি ধান কৃষকের গোলায় উঠেছে বলে সংশ্লিষ্ট দপ্তর সূত্রে জানানো হয়েছে।


রাজ্য সরকারের প্রকল্প :

সুগন্ধি ধান চাষের জন্য রাজ্য সরকারের তরফে একটি প্রকল্প চালু হয়েছে। জেলার নিজস্ব তুলাইপাঞ্জি আবাদে কৃষকদের বিনামূল্যে তুলাইপাঞ্জির বীজ সরবরাহ করা হয়।


তুলাইপাঞ্জির চাহিদা গোটা পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে রয়েছে। তাই জেলার রায়গঞ্জ এবং হেমতাবাদের চাষিদের তুলাইপাঞ্জি চাষে উৎসাহ দেওয়া হয়। ফলে গত কয়েক বছরের মধ্যে তুলাইপাঞ্জির জমির পরিমাণ যেমন বেড়েছে, সেই সঙ্গে ফলনও দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। 


জেলার কৃষি দপ্তর জানিয়েছে যদিও সেই সংখ্যা বাড়বে । জেলা কৃষি অধিকর্তাদের মত অনুযায়ী, 'সুগন্ধী ধান চাষের জন্য রাজ্য সরকারের তরফে বাংলায় প্রকল্প চালু হয়েছে। জেলার নিজস্ব তুলাইপাঞ্জি আবাদে কৃষকদের বিনামূল্যে তুলাইয়ের বীজ সরবরাহ করা হয়। তুলাইয়ের চাহিদা গোটা রাজ্যে রয়েছে। তাই জেলার রায়গঞ্জ এবং হেমতাবাদের চাষিদের তুলাইপাঞ্জি চাষে উৎসাহ দেওয়া হয়। 


ফলে গত কয়েক বছরের মধ্যে তুলাইয়ের জমির পরিমাণ যেমন বেড়েছে, সেই সঙ্গে ফলনও দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। 'তুলাইপাঞ্জি ধানের জীববৈচিত্র্য যাতে কেউ চুরি করতে না পারে, সেই কারণে ২০১৭ সালে জিআই অর্থাৎ জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন-এর অন্তর্ভুক্ত হয়েছে তুলাইপাঞ্জি।' 


রায়গঞ্জ শহর সংলগ্ন কর্ণজোড়া এলাকায় তুলাই ধান ভাঙার জন্য অত্যাধুনিক যন্ত্র বসানো হয়েছে। কৃষকদের এই ধান চাষে আগ্রহ বাড়ানোর জন্য রাজ্য সরকারের তরফ থেকে একাধিক সুযোগসুবিধা দেওয়ার চিন্তাভাবনা চলছে।