শীত চলে এসেছে। কিছুদিন ধরেই হিম হিম আবহ টের পাওয়া যাচ্ছে । বড়দিনের দোরগোড়ায় উত্তরবঙ্গ থেকে দক্ষিণবঙ্গ, দার্জিলিং থেকে পুরুলিয়া কোথাও তো কুয়াশাঘেরা ঠান্ডা, আবহাওয়াই জানান দিচ্ছে, শীত বুঝি জেঁকে ধরল। কাজেই আলমারি থেকে শীতের কাপড় নামানোর চিন্তাও শুরু হয়ে গেছে এবার।
শহরের দিকে এখন শীতের কামড় টের পাওয়া শক্ত। অনেকেই তাই ভারী জ্যাকেট এড়িয়ে চলেন। যদি ক্যাজুয়াল সাজ বেশি পছন্দ হয় তবে সুতি, উল, নিট কাপড়ের তৈরি ফুলস্লিভ টি-শার্ট, ভারী হাইশোল্ডার জিপার টি-শার্ট পরতে পারেন।
শীতের একটা বড় সুবিধা হলো এ মৌসুমে সব পোশাকই পরা যায়। যে জামা পরে গ্রীষ্মে অস্বস্তি লাগে শীতে তা অনায়াসে চাদর, হুডি, ওভারকোট কিংবা জ্যাকেটের নিচে পরা যায়।
হাইশোল্ডার ভারী ফুলস্লিভ টি-শার্টে বড় আকারের বোতাম, হাতা বা নিচের দিকটায় নানা ধরনের কাটের চল এসেছে। কোনোটির সামনের দিকে চেনও থাকতে পারে। চাইলে ভেতরে পরতে পারেন রঙিন টি-শার্ট। সামনের চেন বা বোতাম খুলেও দেখাতে পারেন টি-শার্টের রঙের ঝলক।
শীতে কদর কমেনি জ্যাকেটের। জ্যাকেট মানেই আঁটসাঁট পোশাক ভাবা হতো। এখন বৈচিত্র্য এনেছে করডোরি জ্যাকেট, ক্রপ জ্যাকেট, ডেনিম জ্যাকেট, লেদার, ক্যানভাস, টুইল কিংবা কটন জ্যাকেট। দামটা নাগালেই থাকে। জ্যাকেটের নকশার ক্ষেত্রেও এসেছে ভিন্নতা। আগে একরঙার চল থাকলেও এখন প্রিন্ট ও ফিগার মোটিফ তরুণ প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয়।
আবার সব বয়সের মানুষই হুডি পরছেন দেদার। ছেলেদের ফুলস্লিভ হুডি টি-শার্ট, হুডি শার্ট, হুডি জ্যাকেট, হুডি সোয়েটার, স্লিভলেস হুডি, ব্যাটম্যান হুডি, ব্রকলাইন হুডি সোয়েটারের পাশাপাশি গেঞ্জির কাপড়ের সামনে পকেটওয়ালা হুডিও পেতে পারেন। এখন হুডি টি-শার্টে নকশার বৈচিত্র্য চোখে পড়ছে বেশি। হুডিতে ফ্লোরাল প্রিন্ট, ফিগার কিংবা বিভিন্ন ডুডলও দেখা যাচ্ছে।
ডেনিমের পোশাকে আভিজাত্য টের পাওয়া যায়। ডেনিমের টপস, টিউনিক, জ্যাকেট, শ্রাগের সঙ্গে চলে হালকা শীতের জন্য উইন্ড ব্রেকার, শাল ও ডেনিম জ্যাকেট। সঙ্গে ডেনিমের প্যান্ট, টি-শার্ট, মোটা ফেব্রিকের শার্টও পরেন অনেকে। মেয়েদের মধ্যে এখন প্রচলন বেশি ঢোলা জিনসের। ব্যাগি, স্ট্রেট কাট, বুটকাট লেগ, ফ্লেয়ার জিনস বেশ কদর পাচ্ছে সব বয়সী নারীদের কাছে।
শীতের জন্য গরম পোশাক কেনার আগে কিছু বিষয় মাথায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যার ফলে আপনি বেঁচে যেতে পারেন চুলকানি, জ্বালাপোড়াসহ বিভিন্ন সমস্যা থেকে।
শরীরের আকৃতি অনুযায়ী পোশাক কিনুন
আগে নিজের শরীরের আকৃতি সম্পর্কে ধারণা নিয়ে নিন। কাউকে একটা গরম পোশাকে মানালেই যে সেটা আপনাকেও মানাবে, এমনটা হয় না। নানা স্টাইল পরখ করে দেখতে থাকুন। দৈর্ঘ্য, আকৃতি ও রঙের সঙ্গে মানায় কি না, সেটাই বড় কথা।
সবসময় চেষ্টা করুন নিজের সাধ্যের মধ্যে থাকা বাজেটে স্টাইলিং করতে। আর হ্যাঁ, অনলাইন থেকে কেনাকাটার আগেও সাবধানতা অবলম্বন করুন। যদি কোনো গরম পোশাক অর্ডার করার পর সেটি আপনাকে না মানায় অথবা অন্য কোনো ত্রুটি থাকে, তাহলে যেন ফেরত দিতে পারেন সেটি দেখে টার্মস কন্ডিশন বুঝে কিনুন।
উপকরণ ভিন্ন ভিন্ন আবহাওয়ার জন্য বিভিন্ন উপকরণ সেরা হয়ে থাকে। যদি ঠান্ডা হয় উল বা পালক, যদি ভেজা এবং বাতাস হয় তাহলে জল প্রতিরোধী এবং বায়ুরোধী কাপড় নির্বাচন করা উচিত।
পোশাক এমনভাবে নির্বাচন করতে হবে যাতে করে আবহাওয়ার সঙ্গে তা মানানসই হয়। এমন কিছু নয় যা আবহাওয়ার সঙ্গে যাবে না, হতে পারে সেগুলো সুন্দর। কিন্তু আরাম করে কখনোই সেগুলো পরিধান করতে পারবেন না এবং সম্ভবত এটির জন্য অনুশোচনা করতে হতে পারে।
শীতের পোশাক কেনার আগে কি করবেন :
পছন্দের দোকানে যাওয়ার আগে অনলাইন স্টোর গুলো ঘুরে নিন। Amazon, Flipcart, Messo, Myntra এই স্টোর গুলো দেখে নিতে পারেন। জ্যাকেট এর জন্য অন্য একটি সেরা স্টোর Decathlon।
এখন বহুজাতিক অনেক মল যেমন Jio, Tata Zudio, VMART, Smar-Bazar ইত্যাদি অনেক ভালো ও কম বাজেটের জ্যাকেট পেয়ে যাবেন। দোকানে বা মলে জিনিস দেখার পর প্রথম দেখাতেই পছন্দ করে কিনে ফেলবেন না। দোকান থেকে বের হয়ে একটু হেঁটে বা কফি খেয়ে নিজের পছন্দের পোশাকটি আবার ট্রায়াল দিয়ে নিন। যদি তখনো মনে হয় ওই পোশাকেই মানাচ্ছে, তাহলে কিনে নিন। অনেক সময় দেখা যায়, প্রথম দেখাতে পছন্দ হলেও খানিক পর কম বাজেটের মধ্যে ওটার চেয়ে ভালো জিনিস পাওয়া যায়।
ভালো জ্যাকেট কেনার ক্ষেত্রে কি দেখবেন :
যে কোনো বাজার চলতি জ্যাকেট থেকে ব্র্যান্ডেড কোম্পানির জ্যাকেট কেনাই ভালো। বাজার চলতি জ্যাকেটের দামেই হয়। এক্ষেত্রে ৮০০/- টাকা ঠেকে ৩৫০০/- টাকা দাম হতে পারে। একটি জ্যাকেট শুধুমাত্র একটি শীতের মাত্র ২ থেকে ৩ মাসের জন্য নয়, সম্ভবত যাতে ৬ থেকে ৮ বছর চলে সেই হিসেবে কেনা উচিত।
জ্যাকেটের সাইজ ঠিকঠাক দেখে নিতে হবে। এমন কোনো বড় সাইজ পছন্দ করলেন যাতে বেঢপ মনে হচ্ছে, আবার এমন কোনো সাইজ যেখানে নিজের হাত উপর দিকে উঠাতে কষ্ট হচ্ছে।
ফুলস্ক্যাপ জ্যাকেটের ক্ষেত্রে হাতের গ্রিপের দিকে ইলাস্টিক থাকলে ভাল হয়।
জ্যাকেটের চেন যাতে স্মুথ হয় সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
জ্যাকেটের সাথে হুডি থাকলে অব্যশই শীতের সময় আলাদা অ্যাডভান্টেজ, এক্ষেত্রে আলাদা করে টুপি বহন করতে হবে না। হুডি রাউন্ড সেফ দড়ি বাধা থাকলে খুব ভালো হয়।
ভালো ব্র্যান্ডেড কোম্পানির জ্যাকেট
অনলাইন বা মল বা দোকানে কিনতে পারেন :
Allen Solley (Rs. 1500/- to Rs. 2500/-)
Boldfit (Rs. 1200/- to Rs. 2000/-)
Breakbounce (Rs. 1200/- to Rs. 2500/-)
Columbia (Rs. 3600/- to Rs. 8600/-)
Dollar (Rs. 1200/- to Rs. 2000/-)
Duke (Rs. 1500/- to Rs. 3000/-)
Lee (Rs. 1500/- to Rs. 2500/-)
L'monte (Rs. 4500/- to Rs. 6500/-)
Nike (Rs. 6000/- to Rs. 8000/-)
Puma (Rs. 3000/- to Rs. 4000/-)
Wildcraft (Rs. 4500/- to Rs. 5500/-)
Woodland (Rs. 5000/- to Rs. 6000/-)
Wrangler (Rs. 2400/- to Rs. 4000/-)
প্রাকৃতিক রং দেখে জিনিস কিনুন
কালো, নেভি ব্লু, ছাই, বাদামি—সাধারণত এ কয়েকটা রঙের গরম পোশাক বেশি কেনা হয়। রংগুলো সবকিছুর সঙ্গে মানিয়ে যায়। তবে যদি উজ্জ্বল রঙে যেতে চান তবে কয়েকবার ভেবে দেখুন। উজ্জ্বল রঙে মাঝেমধ্যে বোল্ড লুক দিয়ে থাকে। তবে শীতের জন্য কেনা পোশাকটিতে প্রাকৃতিক রংই মানায় বেশি। সাদা রঙের জ্যাকেট কেনা থেকে এড়িয়ে যাওয়ায় ভালো কারন কারণে অকারণে ময়লা বেশি হয়।
কিছু মতামত:
- কেনার আগে নিজের পছন্দের পোশাকটি বন্ধু বা পরিবারে সদস্যদের শেয়ার করুন। তাদের মতামতও হতে পারে কাজের কাজ।
- শীতের কাপড় আলমারি থেকে বের করে সরাসরি ব্যবহার করা উচিত নয়। কারণ, বছর ধরে বাক্সবন্দি থাকা অব্যবহৃত গরম কাপড়গুলোয় ভ্যাপসা ভাব থাকে। নেতিয়েও যায়। আলমারি থেকে বের করে সরাসরি গায়ে চাপানোটা স্বাস্থ্যসম্মতও নয়। কাজেই ব্যবহারের সময় ঘনিয়ে এলে পরিষ্কার করে নিন আগে, রোদে কিছুক্ষন ফেলে রেখে তারপর গায়ে দিতে পারেন।
- সোয়েটার ব্যবহারের আগে ধুয়ে নেওয়া ভালো। সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার না করে ঠান্ডা জলে শ্যাম্পু বা easy মিশিয়ে এটি ধোয়া উচিত। সাদা কাপড়ের বেলায় সোয়েটার কখনোই ব্রাশ বা হাত দিয়ে ঘষে ধোয়া উচিত নয়। আর জলে সামান্য লেবুর রস মিশিয়ে নিলে ভালো হয়।
- ফ্লানেলের কাপড় ও অন্যান্য চাদরের ক্ষেত্রেও সাবান বা ডিটারজেন্ট দিয়ে না ধুয়ে শ্যাম্পু দিয়ে বা easy দিয়ে ধুলে উজ্জ্বলতা ঠিক থাকে এবং ঘণ্টাখানেক ভিজিয়ে রেখে একটু কচলে নিলেই ময়লা চলে যায়। বেশি ময়লা হলে হালকা গরম জল মিশিয়ে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রেখে সামান্য কচলে নিতে পারেন।
- কোট আর লেদারের কাপড় ঘরে না ধুয়ে লন্ড্রিতে ড্রাই ক্লিন করিয়ে নিন। ব্যবহারের পর হালকাভাবে নরম ব্রাশ দিয়ে ঘষে পরিষ্কার করে হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে রাখতে হবে।
- কাশ্মীরি ও পশমি চাদর ব্যবহারের আগে ভালোভাবে রোদ লাগিয়ে গায়ে দিতে হবে। এগুলো জল দিয়ে ধোয়া উচিত নয়। শুধু ড্রাইওয়াশ করাতে হয়।
- শীতে বেশি ময়লা হয় মোজা, টুপি ও মাফলার। এগুলো কিছুদিন পরপর সাবান বা ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার রাখতে হবে।
যা মনে রাখতে হবে :
- উলের জামাকাপড় উল্টে নিয়ে তারপর আয়রন করুন।
- শীতের কাপড়ে ভুলেও কখনো পারফিউম দিয়ে রাখবেন না। তাহলে কাপড়ে দাগ পড়ে যাবে।
- ঘন ঘন শীতের পোশাক ধোবেন না। এতে পোশাক তার কোমলতা আর ঔজ্জ্বল্য হারায়।
- ঘামযুক্ত শীতের পোশাক আলমারিতে রাখবেন না। পোকার আক্রমণ হতে পারে।
- উলের পোশাক ঝুলিয়ে শুকাতে দেবেন না।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন